https://www.a1news24.com
৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৭:৪৩

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক মঞ্চ নাটক নির্মাণ বাড়ছে

অনলাইন ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মভিত্তিক মঞ্চ নাটক নির্মাণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে নির্মিত হচ্ছে ইতিহাসের নৃশংসতম বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের কাহিনিভিত্তিক নাটকও। ইতিমধ্যে অনেক নাটকেরই সফল মঞ্চায়ন হয়েছে। দর্শকের দৃষ্টিও কেড়েছে। নির্মাতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্বকে মঞ্চে তুলে আনা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। বিশেষ করে ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনার বিশ্লেষণ করে তা মঞ্চে উপস্থাপন খুবই কঠিন।

তার পরেও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালির জীবনকে মঞ্চের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক মঞ্চে সাড়াও ফেলেছে। এর আগে জাতির পিতার জীবন ও কর্ম নিয়ে বিগত সময়ে বিভিন্ন নাট্য সংগঠন বেশ কয়েকটি নাটক নির্মাণ করেছে। সেই সব নাটকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রের বিষয় স্পষ্টভাবে উঠে আসেনি তেমন করে। মুজিব জন্মশতবর্ষের পর থেকে বেশ কিছু নাটকে রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের পেছনের কাহিনী উন্মোচনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই-একটি নাটকে গবেষণাধর্মী তথ্যও উঠে এসেছে।

বিশেষত বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকীর আগে তার হত্যাকাণ্ডের নানা দিক নিয়ে প্রথম মঞ্চে আসে মহাপ্রয়াণের শোক আখ্যান ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ৪০তম প্রযোজনার এই নাটকের বিষয়ে সে সময় প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘আমার জানা মতে, জাতির জনকের মৃত্যুর করুণ কাহিনী নিয়ে এটিই প্রথম নাটক. যা অনেক গবেষণার ফসল। তাই বিচার-বিশ্লেষণে না গিয়ে নাটকটি আগে সবার দেখা উচিত।’

‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’ মঞ্চায়নের মাস তিনেক পর বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনাপ্রবাহ ও পরবর্তী নানা তথ্য নিয়ে নির্মিত নাটক ‘রক্তঋণ’ মঞ্চস্থ হয়। তীরন্দাজ নাট্যদলের পঞ্চম প্রযোজনা ‘রক্তঋণ’ বিষয়ে নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জোর করে ক্ষমতায় বসা খুনি চক্র যে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে মুছে ফেলার নানা অপকর্ম শুরু করেছিল, এই নাটকের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম তা জানতে পারছে।’ এর আগে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ অবলম্বনে তার জীবন ও কর্ম নিয়ে ২০১৭ সালে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও সমাপ্ত স্বাধীনতা’ নামের মঞ্চ নাটক নির্মাণ করেন লোক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। পরে এটির সফল মঞ্চায়নও হয়। তিনি জানান, দীর্ঘ গবেষণা ও পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই নাটকটি নির্মাণ করা হয়েছে।

একই বছরে লিয়াকত আলী লাকী নির্মিত বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনভিত্তিক ঐতিহাসিক নাট্য উপাখ্যান ‘মুজিব মানেই মুক্তি’ শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন হয়। এ সম্পর্কে নাট্যজন লাকী ইনাম বলেন, বঙ্গবন্ধু কীভাবে বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ মহানায়ক হয়ে উঠেছেন, তা নাটকে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক নাটক লেখা ও মঞ্চে উপস্থাপন অত্যন্ত কঠিন। আর তা যদি হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, তাহলে তা সত্যিই অসাধ্য। তবে নির্মাতা এই অসাধ্য সাধনই করেছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুকে শিল্পের আলোয় উপস্থাপনের জন্য নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ৬৪ জেলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৬৪টি নাটক মঞ্চায়ন। এখানেই আমরা থামব না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা কর্মসূচি অব্যাহত রাখব।’ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক নয়, কোনো কথাই তো বলা যায়নি। এখন কিছু কিছু নাটক নির্মাণ হচ্ছে। বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধের নাটকে বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গ আসছে এবং আসবে। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে তো মুক্তিযুদ্ধের নাটক হবে না।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এসব নাটক ছাড়াও মুজিববর্ষের বছরব্যাপী বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিল্পকলার পক্ষ থেকে নির্মিত হয়েছে ‘সোপান বত্রিশ’, ‘এক তর্জনীর নির্দেশ’, ‘শ্রাবণ বিষাদ’, ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’, ‘আগস্টের এক রাত’, ‘মাকড়সা’, ‘তিথির ডানা’, ‘আমাদের খোকা’, ‘মুজিবকোট’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘চেতনায় বঙ্গবন্ধু’, ‘জনকের মৃত্যু নেই’, ‘জনক জাতিস্মর’, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও একজন কাঠমিস্ত্রি’ প্রভৃতি। দেশের ৬৪ জেলায় সেই সব নাটকের প্রদর্শনীও হয়েছে। পাশাপাশি পথনাটক নিয়ে জেলায় জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে উৎসবও। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন নাট্যদলে বেশ কয়েকটি নাটক নির্মাণাধীন আছে। কয়েকটির মহড়াও চলছে।

আরো..