নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ পেতে হলে বাংলাদেশকে ১১টি শর্ত মেনে চলতে হবে। জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন ‘বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান’-নামক এক পরিকল্পনায় এই শর্তগুলোর কথা জানিয়েছেন। গত রোববার(২১ এপ্রিল) ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে বাইডেন প্রশাসনের ‘বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান’ হস্তান্তর করেন।
এর আগে ২০১৩ সালে দুর্বল শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করার সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসন ১৬ দফা ‘বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান’ দিয়েছিল। বাংলাদেশ এরইমধ্যে ১৬ দফা শর্ত মেনে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিলেও এখনো জিএসপি পুনর্বহাল করা হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাইডেন প্রশাসনের দেওয়া প্রথম শর্ত হলো- শ্রমিকদের ইউনিয়ন সংক্রান্ত। এতে বলা হয়, ‘ইউনিয়ন সংগঠক, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধ ও আইনগত প্রতিবাদ কার্যক্রম প্রতিরোধ ও আইন অমান্যকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বাংলাদেশকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া, বাংলাদেশকে শ্রমিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার বা সমাধান করতে হবে এবং গৃহীত বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে।’
দ্বিতীয়ত; বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রদত্ত শ্রমিকদের অধিকার পরিপন্থী যে কোনো আচরণের জন্য কারখানার মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। বাংলাদেশকে নিয়োগকর্তাদের অন্যায্য শ্রমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত ও সমাধান করতে হবে এবং ইউনিয়ন বিরোধী বৈষম্য, প্রতিশোধ এবং অন্যান্য অন্যায্য শ্রমের জন্য শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ বাড়াতে হবে।
তৃতীয়ত; বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে, যেন সংগঠনের স্বাধীনতা এবং যৌথ দর কষাকষি আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। তদুপরি, আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এবং ন্যূনতম সীমার নিচে নেমে গেলে ট্রেড ইউনিয়ন বাতিল করার বিধান বাতিল করতে বাংলাদেশকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকের শতকরা হার বর্তমান ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনতে হবে।
এই শর্তে আরও বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে একটি ইউনিয়নকে সকল সদস্যের অংশগ্রহণে দুটি সাধারণ সভা করতে হবে এবং নিবন্ধনের জন্য একটি গঠনতন্ত্র পেশ করতে হবে, এই বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের প্রত্যাহার করা উচিত। মার্কিন সরকার ধর্মঘটের অধিকারের ওপর অত্যধিক বিধিনিষেধ ও অবৈধ ধর্মঘটের জন্য কঠোর শাস্তির অপসারণও চেয়েছিল।
চতুর্থত ; ইউএসটিআর সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা সংশোধন করতে বলেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৈঠকৈ বাংলাদেশ আমদানি করা পণ্য, বিশেষ করে আমদানি করা তুলা থেকে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার দাবি করে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইডিএএফ) কাছে বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ পণ্য নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করারও দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তপন কান্তি ঘোষ। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ। বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) ছাড়াও শ্রম আইন সংস্কার, তথ্য আইনের সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।