কাউনিয়ায় গরু মহিষ পালন ব্যয়সাধ্য
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ গ্রাম বাংলার চির চেনা রূপ কৃষকেরা লাঙ্গল-জোয়াল-মই কাঁধে নিয়ে কাক ডাকা ভোরে হালুয়া (চাষি) কে গরু মহিষ হাল নিয়ে জমি চাষের জন্য মাঠে যেত। সেই চিরচেনা দৃশ্য কাউনিয়ার গ্রাম-গঞ্জে এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। হঃ হঃ-ডাইন-ডাইন বাও-বাও বলে কৃষক গরু তারিয়ে নিতেও দেখা যায় না। যান্ত্রিক যুগে ট্রাকটর আর পাওয়ার টিলারের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বান্ধব গ্রামীন ঐতিহ্য গরু মহিষের হাল।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানাগেছে, আগে গ্রাম গঞ্জে প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারে গরু মহিষের হাল ছিল। এক গৃহস্থ আর এক গৃহস্থের কাছে হাল ধার নিয়ে গাথা করে জমি চাষ করতো। এখন আর সে দৃর্শ্য চোখে পড়ে না। স্বল্প সময়ে অতি দ্রুত ট্রাকটর আর পাওয়ার টিলার দিয়ে অধিক পরিমান জমি চাষাবাদ করায় কাঠ বাঁশের লাঙ্গল এর হাল হারিয়ে যাচ্ছে। নাজির দহ গ্রামের কৃষক মনসুর আলী জানান গরু মহিষের দাম সহ গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পাশা পাশি হালের দাম কমে যাওয়ায় এলাকার চাষিরা হাল গরু বিক্রয় করে দিয়েছে। এখন অল্প সময় গরুর হালের চেয়ে যান্ত্রিক চাষাবাদে সময় ও অর্থ কম লাগায় কৃষকেরা আর হালের জন্য গরু-মহিষ লালন পালন করে না। পল্লী মারী গ্রামের কৃষক আঃ সামাদ জানায় আগের মতো এলাকায় গো- চারন ভুমি নেই। কৃষকরা গরু মহিষ লালন পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। কৃত্রিম গো খাদ্য দিয়ে গরু মহিষ পালন ব্যয়সাধ্য ও দুরহ হয়ে পড়েছে। তাই এলাকায় গরু মহিষের হাল হারিয়ে যাচ্ছে। গদাই গ্রামের কৃষক শাহজাহান মন্ডল জানান, আগের দিনের গৃহস্থ পরিবার গুলোর ঐতিহ্য ছিল গরু-মহিশের হাল। যার যত বেশী হাল ছিল সে তত বড় গৃহস্থ হিসেবে পরিচিত ছিল। হাল বিক্রয় করে অনেকে সংসার চালাত। আর হালের গরুর যে গবর হতো তা দিয়ে জমির জৈব সার হিসেবে বিক্রয় করতো আর অনেকে নিজের জমিতে দিত। বর্তমানে যান্ত্রিক যুগে কলের লাঙ্গলের কাছে সব হারিয়ে যাচ্ছে। দু একজন যারা এখনও ধরে রেখেছে তারাও উচ্চ মূল্যে গো-খাদ্য কিনতে না পেরে গরু-মহিষ বিক্রয় করে দিচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে দু একটি গৃহস্থ বাড়িতে গরু-মহিষের হাল রয়েছে। এখন যে দু’একটি গরু-মহিষের হাল চোখে পড়ে তারা জমি চাষের চেয়ে মই দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে এবং যাদের অল্প-সল্প জমি রয়েছে তারাই শুধু হাল দিয়ে চাষ করে। এখন যে দু’একটি হাল চোখে পড়ে তাও কিছু দিনের মধ্যে কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে বলে অনেক কৃষক মন্তব্য করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান জৈব সারের চাহিদা পূরনে গরু-মহিষের হালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।