নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার হজ ব্যবস্থাপনায় নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এখনো হজ ব্যবস্থাপনায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও বাকী কাজ আটকে আছে। ফলে সময়মতো হজ প্রত্যাশীরা হজে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন এজেন্সি মালিকরা।
তারা বলছেন, এখনো বাংলাদেশের সকল হজ যাত্রীর মিনার জোন চূড়ান্ত হয়নি। পূর্ণাঙ্গ ও ফাইনাল ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণা হয়নি। এখনো হজ অফিস থেকে মুনাজ্জিমদের ভিসা দেয়নি তারা। অনেক এজেন্সির সৌদি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়নি, হজে যাওয়ার আগে টিকা নেওয়ার কথা বলা হলেও কোনো হাসপাতালে টিকা পৌঁছায়নি, সৌদি ই-হজ সিস্টেমে ভিসার অপশন এখনো ওপেন হয়নি। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা নিরসনে হজ্জে এজেন্সির মালিকরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ নিয়ে বুধবার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ২০২৪ সালের হজ ব্যবস্থাপনার সকল প্রতিবন্ধকতা দ্রুত নিরসনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। ২০২৪ সালের অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা এই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
অপারেটিং হজ এজেন্সি মালিকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন আল-কুতুব হজ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন।
এজেন্সি মালিকরা মনে করছেন এই হজ অব্যবস্থাপনার নেপথ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার ফলে এসব জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করছে। এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার ফলে এসব জটিলতা বেড়েছে। এগুলোর দ্রুত সমাধান না হলে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে বলে ধারনা করছেন তারা।
হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, এখনো বাংলাদেশের সকল হজযাত্রীর মিনার জোন চূড়ান্ত হয়নি, পূর্ণাঙ্গ ও ফাইনাল ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণা করা হয়নি। টিকিট নিশ্চিত না করে কিভাবে এজেন্সি মক্কা-মদিনার বাড়ি ভাড়া করবে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হজ অফিস হতে মুনাজ্জিম ভিসা দেওয়ার কথা বলে সকল কাগজপত্র জমা নিয়ে এখনো মুনাজ্জিম ভিসা দেওয়া হয়নি। কিছুদিন আগে আবার জানালেন আমরা যেন বিজনেস ভিসায় মক্কায় যাই। বিজনেস ভিসার জন্য টাকা জমা দিয়ে বিধি মোতাবেক সবকিছু করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলেছিল- বিজনেস ভিসা নিতে কোনো অসুবিধা হলে তাদেরকে জানাতে। জানিয়েও কোনো প্রতিকার হয়নি। বর্তমানে ওমরা ভিসাও বন্ধ আছে। বিনা নোটিশে ওমরা ভিসা বন্ধ রাখা হলেও মন্ত্রণালয় বা হজ মিশন এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। ২২ এপ্রিল এক সার্কুলারে মোনাজ্জেমদের জন্য ‘হজ মিশন ভিসা’ দেওয়ার কথা জানানো হয়। দীর্ঘদিন যাবত আমরা হজের কাজের সাথে জড়িত আছি। এমন ভিসার নাম আমরা এই প্রথমবার শুনলাম।
তিনি বলেন, ভিসার প্রকৃতিতে বলা হয়েছে- এই ভিসা নিয়ে এখন এজেন্সির সুবিধামত যেতে পারবে এবং হজযাত্রীদের দায়িত্বপালন শেষে প্রত্যাবর্তন করবে। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক হজ মিশন ভিসায় গমন করে হজের নিশ্চয়তা প্রদান করে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিঠির এই ভাষায় আমাদের কাছে সুস্পস্টভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, অন্যান্য বছরের ন্যায় অপারেটিং হজ এজেন্সিকে মোনাজ্জেম ভিসা দেবে না, এই মিশন ভিসা দিয়েই আমাদের বাড়ি ভাড়াসহ আনুসাঙ্গিক কাজ করে হজযাত্রীদের সার্ভিস দিয়ে হজ শেষে বাড়ি ফিরতে হবে। এই ভিসায় মোনাজ্জেমরা এহরামের কাপড় পরতে পারবেন না, হজ করতে পারবেন না, মোনাজ্জিম যদি এহরামের কাপড় পরতে না পারেন তবে হজযাত্রীদের পরিচালনা, তাদের নিয়ে দোয়া করা, তাদের সালাতে ইমামতি করা এগুলো কিভাবে সম্ভব হবে? কারণ মিনা আরাফাতে যিনি হাজী নন তার ইমামতি, দোয়া ইত্যাদি কি হজযাত্রীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? হজযাত্রীদের আবেগ অনুভূতিকে কি আরাফাতের ময়দানে পাগড়ী, টুপি পরে জাগ্রত করা যাবে?
‘এছাড়াও এখনই যদি আমাদের বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়- হজযাত্রীদের ভিসা করা, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়া, তাদেরকে সাথে নিয়ে যাওয়া, বকেয়া টাকা কালেকশন করাসহ বাংলাদেশ পর্বের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ কে করবে? এতে হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। যদি একান্ত মিশন ভিসায় আমাদের বাড়ি ভাড়া করার কাজে যেতেই হয় তবে মোনাজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে। এখনো অনেক এজেন্সির সৌদি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করা হয়নি। কিভাবে তারা বাড়ি ভাড়া করবে? ২০ এপ্রিল হজযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে টিকা দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এখনো সরকার নির্ধারিত কোন হাসপাতালে টিকা পৌঁছায়নি এবং টিকা দেওয়া শুরু হয়নি। আগামী ৯ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। এতোগুলো জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। সৌদি ই-হজ সিস্টেমে ভিসার অপশন এখনো ওপেন হয়নি,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী সদয় দৃষ্টি দিলে এসব জটিলতা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। আর এসব জটিলতা নিরসন না করে হজ এজেন্সিকে হজ আইনে শাস্তির হুমকি দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। যারা বিধি মোতাবেক কাজ করবে না তারা আইনের আওতায় আসবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখানে যেসব সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে এগুলোর সমাধান করার দায়িত্ব ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মক্কার হজ্জ মিশনের। যার যে কাজের দায়িত্ব তিনি সে কাজ যথাযথভাবে যথা সময়ে না করলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্টদের উপরই বর্তায়।
এসময় এজেন্সি মালিকরা হজ ব্যবস্থাপনার সকল প্রতিবন্ধকতা দ্রুত নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে আট দফা দাবি জানান।
তাদের দাবির মধ্যে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশি সকল হাজীর মিনার জোন নির্ধারণ করে ই-হজ সিস্টেমে আপডেট, ফাইনাল ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণা ও অপারেটিং সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকিট নিশ্চিত করা, অপারেটিং এজেন্সির মোনাজ্জেমদের জন্য মোনাজ্জেম ভিসার দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক। অথবা মিশন ভিসা শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়ার কাজে ব্যবহারের ঘোষণা দিয়ে পরবর্তীতে অন্যান্য বছরের ন্যায় মোনাজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন।
এছাড়াও হজযাত্রীর আনুপাতিক হারে সরকারি ও বেসরকারি হাজীদের জন্য বারকোড ভিসা বিতরণ নিশ্চিত করা, যাদের সৌদি অ্যাকাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের অ্যাকাউন্টে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা দরকার। অপারেটিং হজ এজেন্সির অ্যাকাউন্টে গত বছরের মতো যার যার অ্যাকাউন্টে সে রিয়াল পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় সৌদি অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতে প্রায় দেড় মাস সময় লাগছে। ভিসা করার সময় যদি কারো অ্যাকাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তবে ওই হাজীর আর হজ করা সম্ভব হবে না। সৌদি সরকারের বিবিধ চার্জ একেবারে চূড়ান্ত হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার। মেনেনজাইটিস ও ইনফ্লুয়িঞ্জা টিকা প্রদানের দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক। ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের ন্যায় সর্বশেষ হজ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখতে হবে। অতীত ইতিহাস সাক্ষী- অনেক হজযাত্রী সকল প্রস্তুতি গ্রহণের পর মৃত্যুবরণ করেন, কেউ বা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে যান, বিভিন্ন এক্সিডেন্টের কারণে অনেকে শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও হচ্ছে যেতে পারেন না। তখন তাদের স্থলে যদি অন্য হাজীর ভিসা করা না যায় তবে যিনি হজে যেতে পারলেন না তার সম্পূর্ণ টাকাই গচ্ছা যায়। ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে প্রচুর অর্থ অহেতুক সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের অনেকে ক্ষতি হবে। বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে পারলে সৌদি সরকার বাস্তব অবস্থা অবশ্যই বিবেচনা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— আল কাবা হজ এজেন্সির এইচএম বরকতউল্লাহ, এম সেতারা ট্রেডের সেলিম হোসেন আজাদী, মহসিন উদ্দীন ও মাসুদুর রহমান প্রমুখ।