নিজস্ব প্রতিবেদক: স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে ছয় মাসের অন্তবর্তী জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। বাবুল আক্তারকে কেন নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। রাষ্ট্রপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে বাবুল আক্তারের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল বাকী।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সংবাদিকদের বলেন, ‘সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছেন। তিনি এই মামলায় তিনবছর ৭ মাস কারান্তরীণ ছিলেন।
তাঁর বিরুদ্ধে অন্যান্য যে মামলা আছে, সেসব মামলার কোনোটা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে আবার কোনো মামলায় তিনি জামিনে আছেন। ফলে এই জামিন আদেশ নিম্ন আদালতে যাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকছে না।’
শিশির মনি বলেন, ‘গত পহেলা জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সাক্ষী বিচারিক আদালতে আসেনি। আর আগে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের কেউ কেউ সেচ্ছায় আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য রিকলের (প্রত্যাহার) আবেদন করছেন।
তারা আদালতে গিয়ে বলছেন, বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তৎকালীন প্রধান বনজ কুমার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এখন তারা সাক্ষ্য প্রত্যাহার করতে চান। তাছাড়া বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে যেহেতু সরাসরি কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নাই। সবকিছু বিবেচনা করে হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দিয়েছেন।’
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম।
তখন তাঁর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই দিনই মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। সেদিনই বাবুল আক্তারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
বাবুল ও শ্বশুরের করা দুটি মামলা তদন্ত করে পিবিআই। শ্বশুরের মামলায় ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদন গ্রহণ করে বাবুল আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার আগে বাবুল আক্তারের করা মামলায় ৯ জানুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ মামলায় ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্র ওই বছর ১০ অক্টোবর গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। গত বছর ১৩ মার্চ বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। ৯ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়।
এ মামলায় বিচারিক আদালতে আদালতে বিফল হয়ে ২০২২ সালের ৬ মার্চ হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন বাবুল আক্তার। শুনানিসহ ১৪ মার্চ রুল দেন আদালত। কেন জামিন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
গত বছর ৭ ডিসেম্বর রুল শুনানি শুরু হয়। শুনানির পর আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন উচ্চ আদালত। এরপর নতুন করে জামিন আবেদন করেন বাবুল আক্তার।