টি.আই সানি,শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ রাতে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে খেয়ে না খেয়ে রাতদিন পার করতে হয়,মানবেতর জীবন পার করছে এই মহিলাটি। গাজীপুর জেলার শেষ সিমানা এবং ময়মনসিংহ জেলার শেষ সিমান্ত এলাকায় একটি কারখানা গড়ে ঊঠেছে এলাকার মানুষের হাজারও অভিযোগ রয়েছে। খাল দখল,জুর করে সিমানা প্রাচির নির্মাণ জমি দখলসহ নানাঅনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এই কারখানাটির বিরুদ্ধে।
র্আফেলা খাতুন বাড়ির উঠানে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে। পাশেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে বৃদ্ধা নারীর ছেলেমেয়ে পুত্রবধূ। অসহায় চোখে পাশে বসে আছে প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ শুক্কুর আলী। অসহায় হতদরিদ্র আফেলা খাতুনের কান্নাই যেন একমাত্র সম্ভব। কারণ কখন যেন কারখানা কতৃপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে স্বামীর ভিটেমাটি থেকে তাড়িয়ে দেয়। কান্নাই যেন তার একমাত্র সম্বল।
উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, বৃদ্ধা নারী আফেলা খাতুনের জরাজীর্ণ বসতবাড়ির চারপাশে ঢেউটিনের বেড়া। মুহুর্তে মধ্যে চলাচলের জন্য সরু রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানি। মাস দুই এক আছে ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েচিল কারখানা কতৃপক্ষ। এই সময়ের মধ্যে স্বামীর ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়ার হুমকির কারণে বাড়ির উঠানে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বৃদ্ধা নারী আফেলা খাতুন। আফেলা খাতুনের বাড়ির চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে স্থানীয় ইনিভার্সাল গ্রুপের সিলমুন পাইপ এন্ড ফিটিংস লিমিটেড নামক কারখানা কতৃপক্ষ। তাতে করে চারপাশে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।
বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর থেকে বিচারের আশায় প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরেও কোন পতিকার পায়নি। কোম্পানির বিরুদ্ধে কথা বললে যেকোনো মুহুর্তে ধরে নিয়ে যাবে বলেও হুমকী প্রধার করেন কারখানার নিয়োজিত কিছু দালাল। স্বামীর ভিটেমাটি ছেড়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি থাকতে হচ্ছে বৃদ্ধা নারী আফেলা খাতুনের । গত দুই মাস আগে কারখানা কতৃপক্ষের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা বসতবাড়িতে এসে বাড়ির আশপাশের গাছপালা কেটে ২৪ ঘন্টা সময় বেধে দিয়েছে এই কারণে বসতবাড়ির উঠানে এদিকসেদিক ছুটাছুটি করে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছেন। বসতবাড়ির মায়া আর কোথায় থাকবেন প্রতিবন্ধী স্বামী সন্তান নিয়ে কে দিবে আশ্রয় কোথায় পাবেন বিচার এরকম হাজার কথা বলে কেঁদে যাচ্ছেন বৃদ্ধা নারী আফেলা খাতুন।
বৃদ্ধা নারী আফেলা খাতুন বলেন, দীর্ঘ বছর যাবৎ একটি ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে প্রতিবন্ধী স্বামী আর সন্তান নিয়ে বাস করছি। গত কয়েকদিন যাবৎ কারখানার লোকজন আমাদের বাড়ির আশপাশে টিন দিয়ে বেড়া দিচ্ছে। আমাদের বাড়িতে যাওয়া আসার রাস্তা বন্ধ করছে। একটি সরু রাস্তা রয়েছে বের হওয়ার। গত কয়েকদিন যাবৎ কারখানার লোকজনের ভাড়াটে সন্ত্রাসীর আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার। আমার বাড়ির আশপাশে সব গাছপালা ওঁরা কেটে ফেলছে। বাড়ি ছাড়ার জন্য ২৪ ঘন্টা সময় দিছে। আমার বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবো? প্রতিবন্ধী স্বামী সন্তার নিয়ে কার বাড়িতে আশ্রয় নিবো? কে দিবে আমার আশ্রয়? গরিবের বিচার নাই, কেউ আমাদের কথা শুনে না। এলাকার প্রভাবশালীরা কারখানার লোকজনের সঙ্গে মিশে আমাদের বাড়িছাড়া করতে উঠেপড়ে লাগছে। আল্লাহ ছাড়া আমাদের রক্ষা করার কেউ নেই।
বৃদ্ধা আফেলা খাতুনের ছেলে আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা ভালো নেই, ক্ষমতা খাটিয়ে আমাদের ভিটেমাটি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে সব সময়। ইতিমধ্যে আমাদের বসতবাড়ির চারপাশে টিনের বেড়া দিয়েছে কারখানা কতৃপক্ষ। জমি ছাড়তে প্রতিনিয়ত হুমকি। আমরা খুবই ভয়ে থাকি স্ত্রী সন্তান নিয়ে। গাজীপুর মৌজার ২৪শতাংশ জমিতে আমাদের বসতবাড়ি। জমির সঠিক কাগজপত্র থাকার পরও ওঁরা বলে আমাদের কোন জমি নেই। আমাদের বাড়ির চারপাশের গাছপালা কেটে সাবার করছে সন্ত্রাসীরা। আমরা কোথায় যাবো? কোথায় গেলে ন্যায় বিচার পাবো?
প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম বলেন, কারখানা কতৃপক্ষের অত্যাচারে অনেকেই বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তাদের বাড়ির চারপাশে যেভাবে বেড়া দিয়ে বন্ধ করছে তাদেরকেও বসতবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। হঠাৎ করে সকাল বেলা প্রতিবেশীরা ঘুম থেকে উঠে দেখবে সেখানে কোন ঘরবাড়ি দাঁড়িয়ে নেই। সব মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, এত বড় একটি শিল্প মালিকের সঙ্গে আমাদের মতো মানুষের কোন পাত্তা নেই। তাহলে ওঁদের মতো অসহায় মানুষ কি করবে? জোরপূর্বক জমি জবরদখল করে নিচ্ছে জানার পরও আমি কিছু করতে পারছি না। তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আপনারা একটু শক্ত ভাবে পাশে থাকেন।
ইনিভার্সাল কোম্পানি মানব সম্পদ কর্মকর্তা এচইআর এডমিন রবিউল আওয়াল বলেন, ২০১৭ সালে আমরা এখানে বেশকিছু জমি ক্রয় করছি। যে পরিবারটি আজ আপনাদেরকে অভিযোগ দিচ্ছে সেই জমি মালিক কারখানা কতৃপক্ষ। আশপাশের সকল জমি আমাদের এজন্য কারখানা কতৃপক্ষ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। তাদের চলাচলের জন্য রাস্তা রাখা হয়েছে। তাদের জমি কার কাছ থেকে ক্রয় করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, এবিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ আমাকে অবহিত করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এবং খাল দখলের বিষয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্মন করা হয়েছে আইনানুক ব্রবস্থা গ্রহন করা হবে।