১৬ই আগস্ট শুক্রবার রাত ১০টায় রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মেয়েরা রাত দখল করো কর্মসূচি’। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে পূর্বের প্রতিটি ধর্ষণ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে এবং কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণকান্ডের প্রতিবাদের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করে এই কর্মসুচিটি আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার নারীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছিল ঢাকার টিএসসি চত্বর। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নূজিয়া হাসিন রাশার সঞ্চালনায় এই সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ, লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক তানিয়াহ মাহমুদ তিন্নীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের গান, বক্তব্য, কবিতা এবং স্লোগানে মুখর ছিল রাতের কর্মসূচিটি। কর্মসুচিটি রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে এসে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আমরা কি চাই? আজাদী’, ‘গোলাপ না ইনকিলাব? ইনকিলাব ইনকিলাব’, ‘ঢাকা টু কলকাতা উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ সহ নানান স্লোগান দেয়।
রাতের এই সমাবেশ থেকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে লৈঙ্গিক প্রশ্নে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
১। তনু মুনিয়াসহ প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
২। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে।
৩। ধর্ম, গোত্র, বর্ণের উর্ধ্বে গিয়ে প্রতিটি লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দিতে হবে।
৪। ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড চালু এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫। সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে সন্তানের অভিভাবকত্ব দিতে হবে।
৬। ২০০৯ সালের হাইকোর্ট নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন নিপীড়ন বিরোধী কমিটি এবং সেল তৈরি এবং কার্যকর করতে হবে।
৭। নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্বের জন্য যৌক্তিক অনুপাতে কোটা বরাদ্দ দিতে হবে।
৮। ১৮৬০ সালে গর্ভপাতের আইন বাতিল করতে হবে। নারীকে গর্ভপাতের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
৯। নারী এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষের জন্য সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
১০। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে তার লৈঙ্গিক পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে।
১১। সকল প্রকার লৈঙ্গিক বৈষম্যকারী আইন বাতিল করতে হবে।
১২। বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হবে।
১৩। আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে রাষ্ট্রীয় সকল পর্যায়ে নারীর ৩৩% অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।