নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে এক দফা দাবি আদায়ে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও শহরের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় কোটা আন্দোলনের ১০ম দিনে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে তৃতীয়দিনের মতো এ ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হল থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও ফেস্টুনসহ আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ হয়ে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিচ্ছেন তারা। কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন হল ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মোড়ে মোড়ে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহের মধ্যে রয়েছে, শাহবাগ, কাটাবন, কারওয়ান বাজার, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, ফার্মগেট, চানখারপুল, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার মোড়, বঙ্গবাজার, শিক্ষা চত্ত্বর, মৎস্য ভবন, জিপিও, গুলিস্তান, সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত, রামপুরা ব্রিজ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, মহাখালী, বাংলামটর, আগারগাঁও এলাকাসমূহ।
ব্লকেড কর্মসূচিতে রেলপথ ও সড়কপথ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে ব্লকেড চলাকালীন অ্যাম্বুলেন্স, মেডিকেল এমার্জেন্সি রোগীর গাড়ি, সাংবাদিক, ফায়ার সার্ভিস, আন্দোলনের সমন্বয়কদের যানবাহন পারাপারের জন্য ইমার্জেন্সি লেন করা হবে।
কর্মসূচি সফলে শাহবাগ অবরোধ করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কুয়েত মৈত্রী হল, রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, জগন্নাথ হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, কাটাবনে থাকবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কারওয়ান বাজারে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও মাস্টারদা সূর্যসেন হল, মৎস্যভবনে বিজয় একাত্তর হল ও কবি জসিমউদ্দিন হল, ফার্মগেটে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও স্যার এ এফ রহমান হল, পল্টনে ফজলুল হক মুসলিম হল, জিপিওতে ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হল ও কবি সুফিয়া কামাল হল, চাঁনখারপুলে অমর একুশে হল, বোরহান উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী।
এ ছাড়া নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গুলিস্তানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মহাখালীতে সরকারি তিতুমীর কলেজ, রামপুরা ব্রিজে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করবেন। মিরপুর ১২ এলাকায় থাকবেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ও মিরপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা, ‘ব্লকেড ব্লকেড, বাংলা ব্লকেড ‘ একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘কোটা যদি দিতে হয়ে, ৫% এর বেশি নয়’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন৷
শিক্ষার্থীদের এক দফ
সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে নূন্যতম (সর্বোচ্চ ৫%) মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটাপদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।
হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে সমন্বয়কেরা জানান, আমাদের এক দফা দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। হাইকোর্টে যদি ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালও করা হয় তারপরও আমরা রাজপথ ছাড়ব না। আমাদের দাবি সকল গ্রেড নিয়ে। কিন্তু ২০১৮’র পরিপত্রটি শুধু ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরি নিয়ে। তাছাড়া এই পরিপত্রটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলেই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও হাইকোর্ট সেটি অবৈধ ঘোষণা করতে পেরেছে৷ ভবিষ্যতে যে সেটা আবার অন্য কারো রিটের মাধ্যমে অবৈধ ঘোষণা হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই ৷
তারা আরও জানান, যখনই সরকার কিংবা নির্বাহী বিভাগ কোনো ত্রুটিমুক্ত নির্বাহী আদেশ বা পরিপত্র জারির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে কমিশন গঠন করার নির্দেশ দিবেন এবং কোটা সংস্কারের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তখনই আমরা রাজপথ ছেড়ে পড়ার টেবিলে ফিরে আসবো।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা থাকতে পারে। আমাদের আন্দোলন কোটা বাতিলের আন্দোলন নয়, বরং বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের আন্দোলন। আমরা স্পষ্ট করতে চাই, আমরা মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করছি না। বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের জন্য যেকোনো ধরনের রিওয়ার্ড নিয়ে আমরা কখনো প্রশ্ন তুলিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধার পরিধিকে আরও বিস্তৃত করলে আমরা স্বাগত জানাব। কিন্তু নাতি-পুতি কোটার আমরা বিরোধিতা করছি।
তিনি আরও বলেন, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন-টকশো পর্যালোচনা করে তারা মনে করছেন, শুধু প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে কোটা প্রযোজ্য হতে পারে। এর বাইরের কোটাগুলো অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক। সব জায়গা থেকে বিবেচনা এবং বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মতামত বলছে, ৫ শতাংশ কোটা হচ্ছে ন্যূনতম যৌক্তিক কোটা। সরকারি চাকরিতে মেধাকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে।