অনলাইন ডেস্ক: স্বাভাবিকভাবেই সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বাইরে যাওয়ার অভ্যাস সবার। আর বাইরে যাওয়ার আগে গোসল করে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়া হয়। শুধু বাইরে যাওয়ার কারণে নয়, অনেকে অভ্যাসগত কারণেই সকালে গোসল করেন। আবার কেউ কেউ কর্মব্যস্ত দিনশেষে সন্ধ্যায় বা রাতে গোসল করেন।
সকালে গোসল ভালো, না রাতে গোসল করা ভালো―এ নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা মত রয়েছে। যারা সকালে গোসল করেন, তারা এর পক্ষে যুক্তি দেখান। আবার যারা দিনশেষে সন্ধ্যায় বা রাতে গোসল করেন, তারা এ সময়ের পক্ষে যুক্তি দেখান। সকালের পক্ষের মানুষের বিশ্বাস, সকালে গোসল করলে সারাদিনের জন্য প্রস্তত থাকে শরীর। আবার যারা দিনশেষে গোসল করেন তারা মনে করেন, দিনশেষে গোসল করলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়, রাতে ভালো ঘুম হয়। সম্প্রতি সকালে গোসল বা রাতে গোসলের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছ হাফিংটন পোস্ট। এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক, কখন গোসল করা ভালো।
হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে কী হয়: দিনশেষে রাতে ঘুমানোর আগ মুহূর্তে শরীরের অভ্যন্তরীণ মূল তাপমাত্রা অনেক কমিয়ে দেয় সারকাডিয়ান রিদম বা জৈবছন্দ। এই তাপমাত্রা হ্রাসের ঘটনা মস্তিষ্ককে ঘুমানের দিকে প্রভাবিত করে। আবার এর উল্টোটা হয় সকালে ঘুম থেকে উঠার সময়। সকালে ঘুম ভাঙার সময় হলে শরীরে ফের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এ জন্য ঘুমন্ত মস্তিষ্ক ঘুম থেকে উঠার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।
রাতে গোসলের সময় পানি ঠান্ডা নাকি কুসুম গরম, এর প্রভাবও পড়ে ঘুমের মধ্যে। মার্কিন চিকিৎসক ও ঘুমবিষয়ক পরামর্শক ড. রবার্ট ওয়েক্সমেন জানিয়েছেন, রাতে ঘুমের আগে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। এতে দ্রুত ঘুম হয় এবং ঘুমও ভালো হয়। রাতে কুসুম গরম পানিতে গোসল করা ভালো, তবে এটি না করলেও সমস্যা নেই। কেননা, শরীরের জৈবছন্দ নিজ থেকেই মূল তাপমাত্রা হ্রাস করে ঘুমের জন্য প্রভাবিত করে।
এ ঘুমবিষয়ক পরামর্শকের মতে, রাতে ঘুমের আগে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসলের উপকারিতা যদি কেউ ভালোভাবে ভোগ করতে চায়, তাহলে ঘুমের আগে অন্তত ত্রিশ মিনিট বা এরও অধিক সময় নিয়ে গোসল করতে হবে।
ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসলের ফলাফল: অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগ মুহূর্তে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করেন। তাদের বিশ্বাস, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে রাতে ভালো ঘুম হয়। তবে এ ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন ঘুমবিষয়ক পরামর্শক ড. রবার্ট ওয়েক্সমেন। তিনি বলেন, রাতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে ব্রাউন ফ্যাট বা বাদামি অ্যাডিপজ টিস্যু সক্রিয় হয়। এই টিস্যু অন্য সময় শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। আবার যখন শরীর ঠান্ডা হয় তখন জমে থাকা শক্তি ক্ষয় করে শরীরকে উষ্ণ করতে সহায়তা করে।
বাদামি অ্যাডিপজ টিস্যু আবার সক্রিয় হলে দ্রুত ঘুম আসে। কিন্তু রাতে ঘুমানোর আগ মুহূর্তে বেশি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকে রক্তসঞ্চালন কমে শরীরের অভ্যন্তরীণ মূল তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে বাদামি অ্যাডিপজ টিস্যু সক্রিয় হলে ঘুম দ্রুত আসার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। অর্থাৎ, রাতে ঘুমানোর আগে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসলের বৈজ্ঞানিক কোনো উপকারিতা নেই। এ জন্য বলা যায়, সকাল সকাল গোসল করাই ভালো। আর ঘুমবিষয়ক পরামর্শক মনে করেন, রাতে কারও ঘুম ভালো হোক বা না হোক, সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করলে সারাদিন শরীরে আর ঘুমভাব থাকে না।
সকালে বা রাতের গোসলে ত্বকে কী প্রভাব পড়ে: গোসল যখনই হোক না কেন, তা বরাবরই ত্বকের জন্য উপকারী। কানাডিয়ান চর্মরোগবিশেষজ্ঞ ড. জুলিয়া ক্যারোল জানিয়েছেন, দিনে কখন গোসল করা হলো তা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য সেভাবে পার্থক্য সৃষ্টি করে না। গোসল করলে ত্বক পরিষ্কার হয়। তেল ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ দূর হয়। আর রাতে গোসল করলে ত্বকে দিনভর জমে থাকা ধুলাবালি ও জীবাণু দূর হয়।
গোসলের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ক্ষয় হয়ে ত্বককে শুষ্ক করে। এ জন্য গোসল যখনই করা হোক না কেন, গোসলের সময় পানি বেশি গরম না করে হালকা গরম করা উচিত। গোসলের পর ত্বকের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও মানসম্মত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যারা সকালে গোসলের পর সময়ের অভাবে ময়েশ্চারাইজার নিতে পারেন না, তারা রাতে ময়েশ্চারাইজার নিতে পারেন। এতে ত্বক আর্দ্র থাকবে।
রাতের গোসলে চুলের ওপর প্রভাব: চুল ভেজা থাকা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। শুষ্ক চুলের থেকে ভেজা চুল দীর্ঘ সময় ক্ষয়প্রবণ হয়। এ জন্য রাতে গোসল করলে চুল ভালোভাবে শুকানোর আগেই ঘুমিয়ে পড়া হয়। এতে বালিশের সঙ্গে ঘষা লেগে চুলের কিউটিকলের ক্ষতি হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চুলের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেয়ারনোহাউয়ের কর্ণধার পরিচালক জনাথন পামা।
তার মতে, যাদের চুল লম্বা তাদের এই ক্ষতি অনেক বেশি হয়। এ জন্য রাতে গোসল করলে চুল ভালোভাবে শুষ্ক করা জরুরি। এ জন্য ভালো হয় সকালে গোসল করা। কারণ, সকালে গোসল করলে সারাদিনে ধীরে ধীরে এমনিতেই চুল শুকায়। এতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারেরও প্রয়োজন পড়ে না। তবে যাদের চুল ছোট, তাদের এ ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম।