https://www.a1news24.com
১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:৪২

শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো শ্রমের মর্যদা ধুলোয় লুটিয়ে মিশে যেতে বসেছে

কাউনিয়ায় নারীর অবদানের জয়গান শোনা গেলেও

সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ বুদবার মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের বিজয় দিবস। ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওইদিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মহান মে দিবস হচ্ছে শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। কিন্তু এ দিনেও রংপুরের কাউনিয়ার শ্রমিকরা বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা চরম মজুরী বৈষম্যের শিকার। যত বৈষম্যে সব যেন শুধু নারীরই জন্য।

সরেজমিনে উপজেলায় ১টি পৌরসভা সহ ৬টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে পুরুষ শ্রমিকের পাশা পাশি তপ্ত রোদে নারী শ্রমিকেরা কাজ করছে। বর্তমানে পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে নারী শ্রমিকের কদর বেশী হলেও বৈষম্যে যেন তাদের পিছু ছারছে না। মে দিবস লড়াই করতে শেখায় নির্যাতন-নিপীড়ন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে। নারী শ্রমিক হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হলেও তারা প্রতিবাদ করতে পারে না। ধান লাগানো, ধান কাটা, ধান মাড়াই, মাটি কাটা, আলু লাগানো, আলু তোলা, হোটেল, রাইচ মিল চাতাল, বিড়ি ফ্যাক্টরী, ইট ভাটা, রাজ মিস্ত্রীর জোগালী, পাথর ভাঙ্গার কাজ সহ সব রকম ভারী কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা কাজ করলেও মালিকদের কাছ থেকে নারীরা ন্যায্য মজুরী পায় না। এ উপজেলার অধিকাংশ নারী শ্রমিক ষ।ভঅমী পরিত্যাক্তা, বিধবা, কেউবা অধিক সন্তানের জননী আবার কারও ষ।ভঅমী পঙ্গু। অভাবের তাড়নায় তাদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। বিনিময়ে মালিকরা যা দেয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। যদি কেউ মজুরী নিয়ে প্রতিবাদ করে তবে তাদের কাজ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। পুরুষ শ্রমিক যেখানে একই কাজ করে পায় ৪০০-৫০০টাকা সেখানে নারী শ্রমকরা পায় ৩৫০-৩০০ টাকা। বৈষম্যের শিকার এরকম দুই নারী শ্রমিক কল্পনা বেগম ও রমিচা বেওয়ার সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, জিনিস পত্রের যে দাম মালিক যে টাকা দেয়, তাতে কিছুই হয় না। যা পাই তাই দিয়ে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁেচ থাকি । একটি বে- সরকারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী জানাগেছে, এ উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার নারী শ্রমিক রয়েছে, এদের মধ্যে কিছু নারীরা ৪০টি তামাক ভাঙ্গা চাতাল, ৯৪টি মিল চাতাল, ১০টি ইট ভাটায়, ২টি জুট মিল সহ কৃষি খামার, রাজমিস্ত্রীর যোগালী, হোটেলে কাজ করে। দেশে শ্রম আইন আছে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন না থাকায় তারা শ্রম আইনের আওতায় নেই বরং বৈষম্যের শিকার। ২০৬ সালে সরকার শ্রম আইন করে, যেখানা বলা হয়েছে শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ, মজুরী পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্যে ক্ষাতিপূরণ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শিল্প বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, শ্রমিকের ষ।ভঅস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও চাকুরীর অবস্থা ও পরিবেশ এবং শিক্ষাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে সকল আইনের সংশোধন ও সংহতকরণকল্পে প্রণীত আইন। নারী জাগরনের অগ্রদূত মহিয়শি নারী বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনর জন্ম রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে। তিনি নারীদের শিক্ষা, ষ।ভঅস্থ্য, কর্ম নিয়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সেই মহিয়শি নারীর জন্মস্থানের জায়গায় নারী শ্রমিকরা আজও বৈষম্যের শিকার। সভ্যতার বিকাশে নারীর অবদানের জয়গান শোনা গেলেও কাউনিয়ায় নারী শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো শ্রমের মর্যদা ধুলোয় লুটিয়ে মিশে যেতে বসেছে। যত বৈষম্যে সব যেন শুধু নারীরই জন্য। শ্রম আইন আছে কিন্তু এ উপজেলায় শ্রম আইন নিরবে কাঁদে।

আরো..