খেলাধুলা ডেস্ক: সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন কার্টিস ক্যাম্পার, জয়ের জন্য আয়ারল্যান্ডের দরকার তখন ৮ বলে ১৬ রান। প্রথম বলেই শাহিন শাহ আফ্রিদিকে চমৎকার রিভার্স স্কুপেচার মারলেন ক্যাম্পার। শেষ ওভারে তার ব্যাট থেকে এলো আরও দুটি বাউন্ডারি। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল আইরিশরা।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডের জয় ৫ উইকেটে। ডাবলিনে শুক্রবার (১০ মে) ১৮৩ রানের লক্ষ্য ১ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। সব সংস্করণ মিলিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় জয় এটি। প্রথমটি ছিল দুই দলের প্রথম সাক্ষাতে, ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে।
টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বারের দেখাতেই জয়ের স্বাদ পেল আইরিশরা। ২০০৯ সালে প্রথম দেখায় বিশ্বকাপের ম্যাচে জিতেছিল পাকিস্তান। ক্যাম্পার আয়ারল্যান্ডকে শেষের বৈতরণী পার করালেও ব্যাট হাতে জয়ের নায়ক মূলত ওপেনার অ্যান্ডি বালবার্নি। ৫৫ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৭৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান তিনিই।
রান তাড়ায় আয়ারল্যান্ডের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। দ্বিতীয় ওভারে বিদায় নেন অধিনায়ক পল স্টার্লিং, পঞ্চম ওভারে লর্কান টাকার। দলের রান তখন ২ উইকেটে ২৭। সেখান থেকে তৃতীয় উইকেটে হ্যারি টেক্টরের সঙ্গে ৫২ বলে ৭৭ রানের কার্যকর জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন বালবার্নি। ২৭ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩৬ রান করে ফেরেন টেক্টর। বালবার্নি ফিফটি করেন ৩৬ বলে। চতুর্থ উইকেটে তার সঙ্গে ২০ বলে ৩৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন জর্জ ডকরেল।
শেষ ৪ ওভারে আয়ারল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৪০ রান। ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই বিপজ্জনক ডকরেলকে ফিরিয়ে দেন আব্বাস আফ্রিদি। ১২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ডকরেল করেন ২৪ রান। ওই ওভারেই আব্বাসকে একটি ছক্কা মেরে ব্যবধান কমিয়ে আনেন বালবার্নি। নাসিম শাহর করা পরের ওভারে আসে ১১ রান।
শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান। ১৯তম ওভারে প্রথম চার বলে মাত্র ৩ রান দিয়ে বালবার্নির উইকেট নিয়ে পাকিস্তান শিবিরে কিছুটার স্বস্তি এনে দেন আফ্রিদি। এরপরই অবশ্য উইকেটে গিয়ে ক্যাম্পারের দর্শনীয় রিভার্স স্কুপে চার।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১। আব্বাসের প্রথম বলে শর্ট ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লেগে চার পেয়ে যান ক্যাম্পার। পরের বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি তিনি। তৃতীয় বলে নেন ২ রান। চতুর্থ বলে ইনসুইং ইয়র্কারে ক্যাম্পার মাঝব্যাটে খেলতে না পারলেও স্কয়ার লেগ দিয়ে হয়ে যায় চার, স্কোর সমান। পরের বলে লেগ বাই থেকে এক রান নিয়েই উল্লাসে মাতেন ক্যাম্পার।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে রান আউটে কাটা পড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দ্বিতীয় উইকেটে সাইম আইয়ুব ও বাবর আজম ৫৭ বলে ৮৫ রানের জুটিতে এগিয়ে নেন দলকে। সাইম ২৯ বলে ৩টি ছক্কা ও ৪টি চারে করেন ৪৫ রান। ৪৩ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক বাবর।
আজম খান ও শাদাব খান শূন্য রানে বিদায় নিলেও ইফতিখার আহমেদের ৩টি করে চার ও ছক্কায় ১৫ বলে অপরাজিত ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে ১৮২ পর্যন্ত যায় পাকিস্তান। কিন্তু জয়ের জন্য যথেষ্ট হলো না এই পুঁজি।
একই মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী রোববার, পাকিস্তানের জন্য সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার লড়াই, আর আয়ারল্যান্ডের সিরিজ জয়ের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৮২/৬ (সাইম ৪৫, রিজওয়ান ১, বাবর ৫৭, ফাখার ২০, আজম ০, শাদাব ০, ইফতিখার ৩৭*, আফ্রিদি ১৪*; অ্যাডায়ার ৪-০-৪০-১, ম্যাককার্থি ৪-০-৩৯-০, ইয়াং ৪-০-২৭-২, ক্যাম্পার ৩-০-৩০-০, হোয়াইট ৩-০-৩২-০, ডেলানি ২-০-১১-১)
আয়ারল্যান্ড: ১৯.৫ ওভারে ১৮৩/৫ (বালবার্নি ৭৭, স্টার্লিং ৮, টাকার ৪, টেক্টর ৩৬, ডকরেল ২৪, ডেলানি ১০*, ক্যাম্পার ১৫*; আফ্রিদি ৪-০-২৬-১, নাসিম ৪-০-৩৭-১, ওয়াসিম ৪-০-২৮-১, আব্বাস ৩.৫-০-৩৬-২, শাদাব ৪-০-৫৪-০)
ফল: আয়ারল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে আয়ারল্যান্ড
ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যান্ডি বালবার্নি