স্বাস্থ্য ডেস্ক: শীত শেষ হয়েছে। এদিকে গরম পড়া শুরু করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। গ্রীষ্মে স্বাভাবিকভাবেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। আবার রোজা হওয়ায়র ফলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে পানিশূন্যতা এবং ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশ।
আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে সেহরি ও ইফতারে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। তা না হলে পেটের সমস্যা হবে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
সাধারণত ডায়রিয়ার জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, প্রটোজোয়া, ভাইরাস) পানি ও খাবারবাহিত। এ জন্য খাবার তৈরি করার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত। খাবার তৈরির পর ঢেকে রাখতে হবে। যাতে কোনো ময়লা যেতে না পারে। খাবার পরিমিত পরিমাণ খেতে হবে। এতে হজমে সমস্যা হবে না। আর কখনো বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
সেহরি বা ইফতারের খাবার কখনোই খোলাবাজার থেকে কেনা উচিত হবে না। রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের মাছি, কীটপতঙ্গ থাকে, আবার সেসব খাবার একই তেলে একাধিকবার ভাজা হয়। এমনকী খাবার তৈরির পরিবেশও বেশ নোংরা থাকে। এতে রোগজীবাণুও বেশি থাকে। এসব খাবার থেকেও ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাসায় তৈরি খাবারও যদি ৬-৭ ঘণ্টা ফ্রিজের বাইরে রাখা হয়, তাহলে গরমে সেই খাবার নষ্ট হয়ে তাতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ পড়ে। যা খেলে ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে।
এছাড়া খাবার খাওয়ার আগে যদি সাবান দিয়ে হাত না ধোয়া হয়, থালাবাটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়া না হয়, কাঁচা ফলমূল, সালাদ, শাকসবজি ধোয়া না হয়, মাছ-মাংস সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করা না হলেও তাতে রোগজীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে। আর এসব থেকে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
ডায়রিয়া হলে আক্রান্ত ব্যক্তির পানিশূন্যতা থেকে জটিলতা হয়ে থাকে। এ কারণে অধিক পরিমাণ পানি বা তরলজাতীয় খাবার খেতে হয়। বিশুদ্ধ পানি, স্যালাইন, ডাব, ফলের জুস বা শরবত পান করতে হয়। আর যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে ফলের জুসে চিনি দেয়া যাবে না। এছাড়া তরল খাবারের পাশাপাশি এমন খাবার খেতে হবে, যা পানি ও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করবে। যেমন স্যুপ, চিড়া বা চিড়া ভেজানো পানি, ঘরে পাতা দই, নরম ভাত বা জাউভাত, সালাদ, ফল, আলু-পেঁপে-কাঁচকলা সেদ্ধ এবং কম তেল-মসলায় রান্না করা খাবার খেতে হবে।
এ সময় রোগী যদি খাবার মুখে খেতে না পারে তাহলে পানিশূন্যতা হয়, হাত-পা ঠান্ডা হওয়া এবং রক্তচাপ কমে যায়। প্রস্রাব বন্ধ হওয়া বা কমে যাওয়া, বারবার বমি হওয়া, প্রচণ্ড পেটব্যথা এবং পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া বা তরল পড়ার মতো সমস্যা হলে কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে নিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসক রোগীকে শিরায় স্যালাইন দিতে পারে।
ডায়রিয়া হলে অনেকেই পায়খানা বা বমি বন্ধ করতে নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। কেউ আবার কিছুটা সুস্থ হলেই ওষুধের ডোজ শেষ না করেই বাদ দেন। এমনটা করা যাবে না। কারণ, অ্যান্টিবায়োটিকে সব ডায়রিয়া ঠিক হয় না এবং কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে ডায়রিয়া। এ জন্য পানিশূন্যতা দূর করার জন্য চেষ্টা রাখতে হবে। টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।