অনিরুদ্ধ রেজা-রিসেট বাটন চেপে আমরা মোবাইলের স্মৃতি মুছে ফেলা বুঝে থাকি কিন্তু ছাত্রজনতার গণ্অভ্যূথ্যানের পর রাষ্ট্রের হট সিটে আরোহণকারী প্রধান উপদেষ্টা আসলে রিসেট বাটন চেপে মৌলিক কোন কিছুই মূছে ফেলতে চাননি। ইতিহাস কখনোই মূছে ফেলা যায় না ,যাবেও না বরং তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, যা বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং কোটি মানুষের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হরণ করেছে,
সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলতে চেয়েছেন। তার গুরুগম্ভীর ভাবনাকে মহা পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করে স্বর্গ সুখে ভাসছে।
ভাবতে অবাক লাগে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মচারী হয়ে কি করে সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে এরূপ আস্ফালন দেখাতে পারেন। একজন সাইকো পেসেন্ট ছাড়া এমন স্পর্ধা অসম্ভব!
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তরবর্তী কালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মাদ ইউনুছ দেশ পুর্নগঠনের লক্ষ্যে যাবতীয় মৌলিক উপাদান সমন্বিত রেখে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সব কিছু কে সন্নিবেশিত করার লক্ষে রিসেট বাটন চাপ দেবেন বলে উক্তি করায় সরকারের ছোট খাটো এক আমলা সেটিকে অপব্যাখ্যা দিয়ে সোস্যাল মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেটিকে ঘিরে গোটা দেশে হইচই ও বিভিন্ন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম নেয়।
সেটিকে ঘিরে পরাজিত অপশক্তির দোসরেরা এক এক জন বড় বড় মাপের বুদ্ধিজীবী সেজে বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও মন্তব্য সোস্যাল মিডিয়ায় কত্তো যে প্রকাশ করেছেন তার যেন অন্ত নেই।
মন্তব্যকারীদের তেজস্ক্রিয়তা দেখে মনে হয়, এক একজন যেন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের চেয়েও অনেক উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞানী,সম্মানিত ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন!
যা ভাবলেই হাসি পায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ধরনের যোগ্য রাষ্ট্র প্রধান ইতিপূর্বে কখনো দ্বায়িত্ব ভার গ্রহণ করেনি আর ভবিষ্যতে এমন কেউ করবেন কিনা সে ব্যাপারে ব্যপক সংশয় রয়েছে।
ড.মুহাম্মদ ইউনুসের বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি বৃত্ত আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ। পৃথিবীতে আধুনিক এমন কোন রাষ্ট্র প্রধান বা রাষ্ট্রের কোন শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত জনগণ নেই যিনি ড.মুহাম্মদ ইউনুস কে চেনেন না বা জানেন না বরং বাংলাদেশেকে তিনি বিশ্বের দরবারে গৌরব মাখা জাতির একটি ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত এনে দিয়েছেন। তার অর্জন ও যোগ্যতা সত্যিই কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার চেয়ে গর্বের ও ঈর্ষনীয় অর্জন !
গোটা পৃথিবীতে ১০ জনের কম ব্যাক্তিত্ব রয়েছেন যারা তার মতো অধিক সন্মানে ভূষিত ও পরম শ্রদ্ধেয় তথা উচ্চতর জ্ঞানী ও গুণী । আফসোসের বিষয় হচ্ছে, আমরা তার মতো জগৎ শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে পেয়েও আশাবাদী হতে পারছি না। তাকে অনুপ্রেরণা না জুগিয়ে বরং তার উল্টো পথে অনেকেই হাটছি তাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করার জন্য।
আসলে এই ধরনের ধৃষ্টতা যারা আমরা দেখাচ্ছি,তাদের শিক্ষা,বিবেক এবং বুদ্ধির তলানীতে শুভংকরের ফাকি আর সার ও মজ্জা হীন অস্তিত্ব ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই।
অশিক্ষা, কুশিক্ষা,ফাকি বাজী, ধান্দা বাজী,লুটপাট,স্বার্থপরতা আর মিথ্যের সংস্কৃতি তাদের মগজে ও মননে এবং রক্তের শিরায় উপশিরায় মিশে গিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
নিজের জীবন ধ্বংস করে এরা এখন তাদের প্রজন্মের ধ্বংস কিভাবে নিশ্চিত করা যায় ঠিক সেই পথেই অনবরত হাটছে। বস্তুত: মিথ্যেবাদী, ভন্ড,প্রতারক, ধান্দাবাজ,আত্ম অহংকারী, ক্ষমতা ও অর্থলোভী, স্বার্থপর, সাইকো পেসেন্টে ভরে গেছে এ রাষ্ট্র ও প্রায় পুরো সমাজ ব্যবস্থা!
সরকারের এক ক্ষুদ্র আমলার সম্প্রতি যে স্পর্ধা দেখলাম তা পুরোপুরি আত্মঘাতী,রাষ্ট্র বিরোধী এবং চরম পর্যায়ের স্পর্ধা বৈ কিছুই না।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সমালোচনা করতে গেলে,তার ভাষা,তার কথা,তার চিন্তাচেতনা,তার জ্ঞানের গভীরতা সঠিকভাবে মাপতে গেলে, বুঝতে গেলে অবশ্যই তাকে তার সম পর্যায়ের জ্ঞানী গুণী হতে হবে। নইলে এ ধরনের স্পর্ধা শুধুমাত্র পাগলামো ও হাস্যকর বিষয়।
বাস্তবতা এমনই যে,তার আবিস্কৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফর্মুলা সংগ্রহ করে বিশ্বের প্রথম সারির দেশ সমুহ তা নিয়ে ব্যপক চর্চা ও বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করেছে।
“১৯৪৭ পরবর্তী ২০২৪ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি মৌলিক উপাদান ও প্রকৃত ইতিহাস কে সন্নিবেশিত করে নতুন ভাবে সাজিয়ে একটি নব জাগরিত জাতিসত্তা সৃষ্টির প্রক্রিয়া কে রিসেট বাটন বলে।”
( যা বর্তমান সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস রিসেট বাটন বলে আখ্যা দিয়েছেন)
রিসেট বাটন শব্দটি সম্পর্কে বুঝতে একটু গভীর ভাবে অনুধাবন করলেই এ শব্দটি সঠিক সংজ্ঞা বেরিয়ে আসে। এ দেশের প্রকৃত ইতিহাস, আন্দোলন,বিপ্লব, গণ অভ্যূত্থান কোনটাই বাদ দেয়ার মতো নয়। সত্য সকলেরই জানা। মীমাংসিত ও অমীমাংসিত শব্দের ধোঁয়া উড়িয়ে কোন লাভ নেই। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন ,১৯৬৯ এর গন অভ্যূত্থান,
৬ দফার মূল্যায়ন, ১৯৭০ এর যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচন,১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ আর ২০২৪ ছাত্র-জনতার গন অভ্যূত্থান,শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক,হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, তাজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম,শেখ মুজিব রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের গৌরব মাখা ঐতিহ্যবাহী সঠিক ইতিহাস বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণের কাছে স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ ভাবে,নিবিড় ভাবে জানা। কখনোই কোন চরম সত্যকে ঢেকে রাখা যায়নি বা যাবেও না।
নিজের মাতৃভূমির মঙ্গলের জন্য আত্মদান তথা বলিদানের ইতিহাস বাংলাদেশকে গোটা বিশ্বের দরবারে সমাদ্রিত করে তুলেছে।
আসলে ফাস করা প্রশ্নের উত্তর জেনে বিসিএস পাশ করলে যা হয় তাই ঘটেছে সম্প্রতি ক্ষুদ্র এক আমলার অভিব্যক্তি থেকে ।
তাই দয়া করে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্র প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের উচ্চারিত “রি-সেট বাটন” চাপবেন বলা বাক্যটির অপব্যাখ্যা এবং অপপ্রচার আর কেউ চালাবেন না।
নইলে আপনি রাষ্ট্রদ্রোহিতা দায়ে অভিযুক্ত হবেন।
আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের রাষ্ট্র সংস্কারের মহান দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনের ক্ষেত্রে সকলেই যে যার অবস্থান থেকে আন্তরিক ও ধৈর্যের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুততার সাথে এগিয়ে আসি..
তার হাতকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলি।
দেশের ভয়াবহ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ভঙ্গুর মূহুর্তে-
তিনি যেন দেশবাসীর পক্ষ থেকে দেয়া তার এই পবিত্র মহান দ্বায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনে সাফল্যমণ্ডিত হন।