https://www.a1news24.com
৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৭:৫৮

রাজনীতির ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজদের রাজত্ব, কর্ণফুলীতে স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীদের ভয়!

নিজস্ব প্রতিবেদক -চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীদের ওপর ভয়াবহ চাঁদাবাজি চলছে! সংঘবদ্ধ একটি চক্র দিনের পর দিন মিল-কারখানার সামনে ব্যবসায়ীদের গাড়ি আটকে চাঁদা দাবি করছে, প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে, অথচ প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কিংবা নানা কারণে পারছে না।

অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রের সঙ্গে স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক নেতা জড়িত। যারা বিএনপি দলের রাজনীতি করেন। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।

গত কয়েক মাসে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও বিএফডিসি সংলগ্ন এলাকায় চাঁদাবাজির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রতিবারই একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় থাকা যুবকদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করা হয় অভিনব কৌশলে।

সাম্প্রতিক ঘটনায়, আজ (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে পশ্চিম শিকলবাহার স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল (৪১) চাঁদাবাজদের কবলে পড়েন। ইছানগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জামিল সাহেবের বাংলোর সামনে তার গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। সন্দ্বীপ ফজলু (৩৫), সাহাব উদ্দিন (২৮), মিজানুর রহমান (২৫) ও আব্দুল মন্নান তার ক্রয় করা স্ক্র্যাপ নিতে বাঁধা দেন। গাড়ি আটকান। প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

একাধিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কর্ণফুলীতে হেলাল, গফুর, ইরফান, মোর্শেদ, বেলাল, সাইফুল, হাসানসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত, তাদের সবার বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি৷ তবে তারা সকলে রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

স্থানীয়দের আরো অভিযোগ, কর্ণফুলীর কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের নিরবতা এই চক্রকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, থানায় বারবার জানানো হলেও পুলিশ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গত কয়েক মাসে অনেকেই অভিযোগ নিয়ে থানায় গেছেন, কিন্তু রাজনৈতিক চাপের কারণে পুলিশের ভূমিকা সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।

একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কি কর্ণফুলীতে ব্যবসা করতে পারব না? পুলিশ কি আমাদের রক্ষা করবে, নাকি চাঁদাবাজদের রক্ষা করবে? স্থানীয়রা বলছেন, যারা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন, তাদেরই উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে! নয়তো জিডি নিচ্ছে। অথচ চাঁদাবাজির ঘটনায় জিডি করা হাস্যকর। ফলে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য থামছে না, বরং দিনে দিনে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ জানিয়েছেন, ইছানগরে স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ি ইসমাইলের ঘটনার বিষয়টি তদন্তের জন্য এসআই মো. মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বলেছেন, অপরাধীদের রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং এই চক্রের সঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলেও তদন্তে এ বিষয়ে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা কোথায়? কর্ণফুলীতে আইনের শাসন কার্যকর হচ্ছে না বলেই দিনের পর দিন চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। যদি পুলিশ শুরুতেই কঠোর পদক্ষেপ নিত, তবে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হতো না।

ব্যবসায়ীরা যদি পুলিশের কাছেই আশ্রয় না পান, তাহলে তারা কোথায় যাবেন। আবার থানায় অভিযোগ নেওয়া হলেও, কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

আরো..