নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের উত্তর চাতরী গ্রামের বাসিন্দারা মো. মোরশেদ (৪৫) ও মো. সানি (২২) নামে দুই ব্যক্তির অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এলাকায় মোরশেদ চেক মামলাবাজ নামে পরিচিত। গ্রামটির সহজ সরল বাসিন্দারা তার এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলার হুমকি দেন বলে মোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
অনেকেই বলেন, পান থেকে চুন খসলেই মামলা ঢুকে দেন মোরশেদ। তার এসব ভুয়া মামলার ফাঁদে পড়ে চরমভাবে হয়রানি ও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাতরী গ্রামের লোকজন। এদের দায়ের করা মিথ্যা মামলার কারণে আদালতের বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি আর আর্থিক ক্ষতিতে পড়ে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব। তার কারণে মানসিক, শারীরিক ও আর্থিকভাবে এলাকার লোকজন চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
মামলাবাজ মোরশেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামের ৬৬ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকার বাসিন্দাদের পক্ষে চাতরীর মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি গত ২০ মে (সোমবার) আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা পুলিশের ওসির কাছে এর প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নগরীর কদমতলী মাতিয়ার পুল এলাকার মৃত হাকীম শরীফের ছেলে মো. মোরশেদ (৪৫) ও তার ছেলে মো. সানি (২২) বর্তমানে এরা বসবাস করেন আনোয়ারার চাতরী ইউনিয়নের চাতরী গ্রামে। মোরশেদ নামে এই ব্যক্তি চাতরী আসার পর থেকেই তার প্রতারণায় শিকার হওয়া লোকজন সমাজে একের পর এক অভিযোগ দিতে দেখা যায়।
কখনো অর্থ আত্মসাৎ, কখনো লোকজনকে আটকিয়ে টাকা দাবি, কখনো পুলিশের ভয়ভীতি দেখানো, কখনো মামলার ভয়, কখনো নিজের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর মতো অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এতে সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত কয়েকদিন পূর্বেও মোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে আসেন চাক্তাই এলাকার এক বিকাশ এজেন্টের মালিক। বিকাশে লেনদেন করে টাকা না দিয়ে চলে আসায়, আনোয়ারায় খোঁজতে আসলে উল্টো তাঁকে ঘরে আটকিয়ে রাখে মোরশেদ। যা নিয়ে নানা ঘটনা ঘটে চাতরী গ্রামে। মোরশেদের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময় তিনি জেলও কেটেছেন।
উত্তর চাতরী ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার অছি উদ্দিন চৌকিদারের বাড়ির মনির উদ্দিন বলেন, ‘এই মোরশেদ এলাকায় বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে।’ মো. সুমন নামের আরেক যুবক বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রতারণার মাধ্যমে মোরশেদ সাড়ে তিন লাখ টাকা দু’লোক থেকে হাতিয়ে নেন। পরে তারা টাকা ফেরত নিতে আসলে উল্টো তাদের বেঁধে রাখেন। পরে এলাকার লোকজন তাদের উদ্ধার করেন।’
একই এলাকার ষাটোর্ধ বয়সের আবদুল ছবুর বলেন, ‘মোরশেদের যন্ত্রণায় এলাকায় আমরা অতিষ্ঠ। সে বিভিন্ন খারাপ কাজ করে। বিভিন্ন অপরিচিত লোকজন এনে ঝগড়া করে। এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করলে উল্টো মামলার হুমকি দেন।’
একই অভিযোগ আয়েশা খাতুনেরও।
অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, ২০১৮ সালের ০৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে তাকে নিয়ে “চেক নিয়ে আইনি খেলা খেলেন মোরশেদ” শীর্ষক সংবাদ বের হয়। ভুয়া চেক প্রত্যাখ্যানের (ডিজঅনার) মামলা ঠুকে দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ ছিলো তখনো।
এই মোরশেদ ৬ বছর আগেও চট্টগ্রামের দুই আইনজীবী মো. রিদওয়ানুল হক ও ভবতোষ নাথের সাক্ষর ও সিলমোহর জাল করে একটি চেকের মামলায় জামিন নেন। এ জন্য মোরশেদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে আইনজীবীরা মামলা করেন।
এ বিষয়ে তৎকালিন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেছিলেন, এই মোরশেদ আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি শ্রমিক পরিবারের চার সদস্যকে শিল্পপতি বানিয়ে ভুয়া চেকের মামলায় ফাঁসিয়েছেন। অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে দুই আইনজীবীর সই ও সিল জাল করে নিজের জামিননামা নিজে তৈরি করেছেন। মোরশেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। মোরশেদকে চট্টগ্রামের কোনো আইনজীবী ভবিষ্যতে আইনি সহায়তা দেবে না।’
জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট চাতুরী এলাকার ইউপি সদস্য রাশেদ নেওয়াজ ছুট্টো বলেন, ‘কিছুদিন আগে পুলিশ ৯৯৯ এ কল পেয়ে আমিসহ মোরশেদের বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি বাড়ির জানালার কাঁচ ভাঙা। মোটর সাইকেলে আগুন জ্বলছে। পরে মোরশেদ পুলিশকে অভিযোগ করেন গ্রামের লোকজন এ কাণ্ড করেছে। গ্রামের লোকজন জানান মোরশেদ নিজেই এসব ঘটিয়েছেন। এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের কাছে একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।’
অভিযুক্ত মো. মোরশেদ বলেন, ‘২০২১ সালে শহীদুল নামে একজনের বিরুদ্ধে আমি চেকের মামলা করেছিলাম। মূলত ওই মামলাটা তুলে নেওয়ার জন্য শহীদ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করতেছে। ওরা মামলা তুলে না নিলে প্রাণনাশের হুমকিও দেন। ইতিমধ্যে ওরা আমাদের বাড়িতে এসে হামলাও করেছেন।’
আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়ন পরিষদ আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘এসব বিষয়ে পুলিশ ভালো বলতে পারবে। আপনারা পুলিশের সাথে কথা বলেন। ইউএনও স্যারের কাছে যখন অভিযোগ দিয়েছে নিশ্চয়ই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন,’ আমার অফিসে অভিযোগ দিলেও এখনো আমার টেবিলে আসেনি। আসলে খোঁজ খবর নিয়ে জনস্বার্থে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ একই কথা জানালেন আনোয়ারার ওসি সোহের আহাম্মদও।