অনলাইন ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি বাস্তবসম্মত নয়। কারণ তিস্তা নদীর পরিস্থিতি ভালো নয়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষের কৃষিকাজ ও পানীয় জলের প্রয়োজন মেটাতে তিস্তার পানি প্রয়োজন। নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের কয়েক দিন পর এই চিঠি দিলেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা ও গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো আলোচনা করা উচিত হবে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লেখেন, ‘বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পরিপ্রেক্ষিতে আমি এই চিঠি লিখছি। মনে হচ্ছে, বৈঠকে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়।
’
মমতার ভাষ্য, ‘ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসি, সম্মান করি ও সব সময় মঙ্গল কামনা করি। অতীতে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে পশ্চিমবঙ্গ।’ ছিটমহল বিনিময়, রেল ও বাস চলাচলের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘তবে পানি খুবই মূল্যবান বস্তু এবং মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার প্রধান উপকরণ।
আমরা এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে আপস করতে পারি না, যা জনগণের ওপর মারাত্মক ও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ ধরনের চুক্তির ফলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
মমতা আরো লেখেন, ‘২০২৬ সালে শেষ হতে যাওয়া ইন্দো-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন প্রক্রিয়াধীন। আপনি জানেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর এর বিশাল প্রভাব রয়েছে। অনেক বছর ধরে ভারত ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে নদীর গঠনতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত হয়েছে এবং রাজ্যের পানির প্রাপ্যতা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
গত ২০০ বছরে গঙ্গার পূর্বমুখী স্থানান্তরের ফলে এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি নদীর সংযোগ বিঘ্নিত হয়েছে।’
মমতা লিখেছেন, ‘দৃশ্যত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সিকিমে বেশ কিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ, বন উজাড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মনে হচ্ছে, বৈঠকে বাংলাদেশে তিস্তা পুনরুদ্ধারের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত সরকার। আমি অবাক হয়েছি এটা দেখে যে জলশক্তি মন্ত্রণালয় ভারতীয় অংশে নদীটিকে আগের রূপে ফেরাতে কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়নি। উল্লিখিত কারণে তিস্তার পানির প্রবাহ বছরের পর বছর ধরে কমে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি করলে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ সেচের পানির সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন বাস্তবসম্মতভাবে সম্ভব নয়।’
চিঠির শেষ দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘রাজ্য সরকারের সম্পৃক্ততা ছাড়া তিস্তার পানিবণ্টন ও ফারাক্কা নিয়ে কোনো আলোচনাই বাংলাদেশের সঙ্গে করা উচিত নয়। পশ্চিমবঙ্গের জনগণের স্বার্থ সবার ওপরে, তার সঙ্গে কোনো মূল্যেই আপস করা উচিত নয়। আশা করছি, আপনি জনগণের প্রয়োজনীয়তা ও প্রত্যাশা উপলব্ধি করবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’
গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের সময় বাংলাদেশে তিস্তা নদীর পানি সংরক্ষণ প্রকল্প নিয়ে আগ্রহের ইঙ্গিত দেয় ভারত। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি জানান, বাংলাদেশে তিস্তার পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার জন্য শিগগির ভারতের একটি কারিগরি দল ঢাকায় আসবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে দেড় দশক ধরে ঝুলে আছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি।