আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ছিলেন কট্টরভারতবিরোধী। ‘ভারত হটাও’ স্লোগান নিয়ে শুরু করেছিলেন নির্বাচনী প্রচার; বলেছিলেন, ভারতীয় সেনারা মালদ্বীপে আর নয়, তাদের চলে যেতে হবে।
মালদ্বীপে ভারতবিরোধী এই অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে জয় পান চীনপন্থি হিসাবে পরিচিত মোহাম্মদ মুইজ্জু। গত বছরের নভেম্বরে ক্ষমতায় বসার পর ভারত বিরোধিতা থেকে এক চুলও সরেননি তিনি।
এবছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণের সপ্তাহখানেক আগেও মালদ্বীপের তিনটি বিমান চলাচলের স্থান থেকে ৯০ জন ভারতীয় সেনাকে সরিয়ে নিতে নয়া দিল্লির কাছে অনুরোধ জানান প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। ভারত সরকার তার অনুরোধ রাখেও।
তবে বেশিদিন এই ভারতবিরোধী অবস্থান ধরে রাখতে পারলেন না মুইজ্জু। পরিস্থিতির চাপে তাকে ইউটার্ন নিতে হলো। বলতে বাধ্য হলেন, ভারত তার বন্ধু রাষ্ট্র ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। শুধু তাই নয়, ভারতের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হয়, এমন কিছু মালদ্বীপ করবে না বলেও জানান তিনি।
গত বছর মালদ্বীপে নির্বাচনের আগে এবং পরে মুইজ্জুর ভারতবিরোধী অবস্থানে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ ছিল নয়া দিল্লি। এ বছরের শুরু থেকে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন বাড়তে থাকে।
নরেন্দ্র মোদী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভারতের কেন্দ্রশাসিত দ্বীপপুঞ্জ লাক্ষাদ্বীপ সফরে গেলে তাকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় অসম্মানজনক মন্তব্য করে বসেন মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী। ভারতীয়দের মালদ্বীপের বদলে লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ করতে উৎসাহিত করছেন মোদী, বিষয়টিকে এভাবেই দেখেছিলেন তারা।
ওই তিন মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মালদ্বীপ বয়কটের ডাক ওঠে। বলিউড তারকা থেকে শুরু করে অনেক ভারতীয় মালদ্বীপে ঘুরতে না যাওয়ার আহ্বান জানান।
ভারতীয় পর্যটকরা গণহারে মালদ্বীপ যাওয়া বন্ধ করলে বেকায়দায় পড়েন মুইজ্জু। তার অর্থনীতি পর্যটন শিল্পের ওপর দাঁড়িয়ে। অর্থনীতি চাঙা রাখতে একপর্যায়ে চীনের শরণাপন্ন হন মুইজ্জু। মালদ্বীপে আরও পর্যটক পাঠাতে চীন সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
কারণ ভারতীয়দের মালদ্বীপ বয়কটের প্রথম ধাক্কায় ১৪ হাজারের বেশি হোটেল বুকিং বাতিল হয়ে যায়। মালদ্বীপের হোটেল ভাড়া ২০ শতাংশ কমে যায়। বাতিল হয় বিমানের বুকিংও।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন খবর এল ভারত সফর করছেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। ভারতের সঙ্গে তিক্ত হয়ে ওঠা সম্পর্ক মেরামত করা। ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের জেরে মুখ থুবড়ে পড়া পর্যটনশিল্প রক্ষায় এছাড়া উপায় নেই।
তাই ক্ষমতা গ্রহণের পর রবিবার প্রথমবারের মতো নয়াদিল্লিতে গিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুইজ্জু বলেছেন, ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়, এমন কোনও কাজ মালদ্বীপ করবে না। নয়াদিল্লিকে মূল্যবান অংশীদার ও বন্ধু হিসেবেই দেখা হবে।
ভারতও ভূ-রাজনৈতিক, বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর অতীত কর্মকাণ্ড ভুলে তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মুইজ্জু তাদের বলেছেন, নয়া দিল্লি মালদ্বীপের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার। প্রতিরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি খাতে সহযোগিতা সবসময়ই অগ্রাধিকার পাবে।
একই সঙ্গে ভারতীয় পর্যটকদের মালদ্বীপে ফেরার আহ্বান জানিয়ে মুইজ্জু বলেন, “প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সম্মান জানানো আমাদের ডিএনএর অংশ। ভারতীয়রা ইতিবাচক অবদান রেখেছে। ভারতীয় পর্যটক আমাদের দেশে স্বাগতম।”