অনলাইন ডেস্ক: মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে প্রবীর ধর নামে এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। আজ রোববার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল শনিবার বিকেল থেকে মিয়ানমারের ভেতরে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়। আজ সকালেও নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু, উখিয়ার পালংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সীমান্তের ওপারে রাতভর চলা গোলাগুলিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সীমান্ত এলাকার মানুষ।
শনিবার থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ছোঁড়া দুটি মর্টার শেল ও একাধিক গুলি এসে পড়েছে তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে অনেকে। যদিও সীমান্তের ওপারে চলমান সংঘর্ষ ও উত্তেজনায় বিজিবির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানানো হয়।
ধুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আলম বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে যে পরিমাণ গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে আগে তেমনটা শোনা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ঘর থেকে বের ভয় পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। শনিবার দিবাগত রাত ও রোববার সকালে তুমব্রুর কোনারপাড়ার ইলিয়াস হোসেনের বসতঘরের টিনে পড়েছে মর্টার শেল। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
আশরাফুল ইসলাম তুহিন নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, আমাদের ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের উঠানে একটি মর্টার শেল এসে পড়ছে। এ ছাড়া আশপাশে আরও বেশ কিছু গুলি এসে পড়ে এলাকায়। ওপারে এখনও সংঘর্ষ চলছে। আমরা ভয়ে বাড়িঘর থেকে বের হতে পারতেছি না। কোনাপাড়া ও পশ্চিমপাড়া অনেক লোকজন সেখান থেকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে।
তথ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে থেমে থেমে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে ব্যবহৃত গোলা ও মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের লোকালয়ে এসে পড়ছে। এর আগেও মর্টার শেল ও গুলি এসে পড়েছে এই এলাকায়। এ ছাড়া টেকনাফের উলুবনিয়ায় মর্টার শেল এবং উখিয়ার পালংখালীর বটতলী এলাকায় গোলার ভাঙ্গা অংশ এসে পড়ে।
এর আগেও মর্টার শেল ও গোলার অন্তত চারটি অংশ নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু, কোনারপাড়া ও পশ্চিম ঘুমধুমে এসে পড়ে। বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেন।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারে এখনো প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ পাচ্ছি আমরা। এবার গোলাগুলির শব্দের তীব্রতা বেশি হওয়ায় সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে উখিয়া এবং টেকনাফ সীমান্তে রাতে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেলেও সকাল নয়টার দিকে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনতে পায় স্থানীয়রা।
স্থানীয় টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা ও গণমাধ্যম কর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাতে থেমে-থেমে গুলির শব্দ শোনা গেলেও সকাল নয়টার দিকে ব্যাপক গুলির শব্দ ভেসে আসে। ফলে সীমান্ত এলাকায় আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের সীমান্তে থেমে-থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে বরাবরের মতো রোহিঙ্গা এবং বিদ্রোহীরা যেন আমার দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
বরাবরের মতোই সীমান্তে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।