স্পোর্টস রিপোর্টার: জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা চরম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফুটবলার মাতসুশিমা সুমাইয়ার এক ফেসবুক স্ট্যাটাস ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন তোলে। তিনি দাবি করেছেন, হুমকির মুখে রয়েছেন তারা।
পিটার বাটলার ইস্যুতে বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলারের মধ্যে রয়েছেন সুমাইয়াও। তার স্ট্যাটাসের পর নারী ফুটবলারদের বর্তমান অবস্থা জানতে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সাফজয়ী ঋতুপর্ণা চাকমাসহ আরও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ সাড়া দেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটবলার মেসেজে জানান, ‘আমরা ভীষণ ট্রমার মধ্যে আছি। কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা নেই। নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।’
নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পরও জাতীয় দলের সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে কোচ পিটার বাটলারের দ্বন্দ্ব মেটেনি। গত সপ্তাহে কোচের ডাকা সভায় সাবিনা-মনিকারাদের অংশ না নেওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর ১৮ ফুটবলার সংবাদমাধ্যমে তিন পৃষ্ঠার এক বিবৃতি দিয়ে বাটলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন।
ফুটবলারদের বিদ্রোহের জেরে বাফুফে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। রবিবার ও সোমবার ১৮ ফুটবলার তাদের অভিযোগ কমিটির কাছে তুলে ধরেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই কোচ বাটলারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা আরও হতাশ করেছে ফুটবলারদের।
ফেসবুকে অপপ্রচার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এক নারী ফুটবলার। তিনি বলেন, ‘ভুয়া সংবাদ ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা আমাদের বলা কথার সঙ্গে মেলে না। এসব মিথ্যা তথ্য প্রচারে আমরা বিস্মিত।’
ফুটবলারদের পরিবারের ওপরও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কি সবসময় মুখ বুজে মেনে নেব? কোনো অভিযোগ করলেই উল্টো আমাদের দোষ খোঁজা হয়।’
সুমাইয়ার স্ট্যাটাস থেকেও ফুটবলারদের মানসিক সংকটের ইঙ্গিত মেলে। তিনি লেখেন, ‘এই মানসিক অবস্থা থেকে বের হতে কতদিন লাগবে, জানি না। তবে আশা করি, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এমন পরিস্থিতির শিকার না হয়।’
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে লেখা ইংরেজি চিঠির কারণেই হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি করেন সুমাইয়া। কেন বাংলায় না লিখে ইংরেজিতে লিখেছেন, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে চিঠি লেখার নিয়ম অনুসারে, প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে চিঠি ইংরেজিতেই লিখতে হয়। আমি সেই নিয়ম মেনেছি।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের জন্য বাফুফে ক্যাম্প ছেড়ে বাসায় যাওয়া সুমাইয়াকে ক্যাম্পে ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের বিরুদ্ধে। সুমাইয়ার বাবাকে ফোন করে এমন নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
বাফুফে সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নারী ফুটবলাররা আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব। হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’