অনলাইন ডেস্ক: দেশের মূল ধারার গণমাধ্যমে গতবছর সর্বোচ্চ ৪৪টি বিভ্রান্তিকর বা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেক পার্টনার বুম বাংলাদেশের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি আগের বছরে গণমাধ্যমে কতগুলো ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার তালিকা প্রকাশ করে। তবে এ বছর জাতীয় নির্বাচনের কারণে দেরিতে ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বুম বাংলাদেশের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ফেসবুক ফ্যাক্ট চেকের কার্যক্রম শুরুর পর ২০২০ সালে দেশের মূল ধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত মোট ২৩টি ভুয়া খবর চিহ্নিত করে। এর পরের বছর (২০২১) সালে ১১টি ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করে গণমাধ্যমগুলো। পাশাপাশি ২০২২ সালে ১৬টি ভুয়া বা বিভ্রান্তির সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
তবে গতবছর দেশের মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোয় সর্বোচ্চ ৪৪টি ভুয়া খবর প্রকাশিত হয়। বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদন বলছে, আগের তিন বছরের তুলনায় (২০২০-২২) এই সংখ্যা অনেক বেশি। যদিও গণমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পোস্টকে রেট করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। এজন্য দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া খবরের পুরো চিত্র এর মধ্যে উঠে আসবে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হওয়াসহ ঘটনাবহুল ২০২৩ সালে বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি কনটেন্ট (ছবি, টেক্সক্ট, ভিডিও) যেমন একদিকে মানুষের মধ্যে সারা ফেলেছিল, তেমনি অন্যদিকে মিসইনফরমেশনের ক্ষেত্রে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে। যার ফলে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বুম বাংলাদেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) সিগনেটরি বাংলাদেশের একাধিক ফ্যাক্ট চেক সংস্থা ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর খবর প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
২০২৩ সালে প্রকাশিত ৪৪টি ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর খবরের বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশিত খবরগুলোর কোনোটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, কোনো একটি মূল ধারার গণমাধ্যমে খবরটি প্রথমে প্রচারিত হয়েছে, পরে তা ছড়িয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তথ্য যাচাই না করে অন্যের প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫টির বেশি মূল ধারার গণমাধ্যমও ভুয়া খবরের ফাঁদে পা দিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতবছর ভুয়া খবর প্রচারে টানা চতুর্থবারের মতো শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভি। গণমাধ্যমটির ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ নয়টি ভুয়া খবর ফ্যাক্টচেকে রেটিংয়ে এনেছে বুম বাংলাদেশ। এরপর ৭টি ভুল সংবাদ প্রচার করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরটিভি। এছাড়া তিন নম্বরে অবস্থান করা বাংলানিউজ২৪ ৬টি ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার করে।
এছাড়া ঢাকা পোস্ট, আজকের পত্রিকা, সমকাল, আমাদের সময় ও দৈনিক ইত্তেফাক গতবছর ৫টি করে ভুল বা বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার করে। পাশাপাশি ৪টি করে ভুয়া খবর প্রচার করে চ্যানেল 24, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, বাংলা ট্রিবিউন ও প্রথম আলো। একইভাবে ৩টি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে ডিবিসি নিউজ, বিডিনিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, জুম বাংলা, ডেইলি বাংলাদেশ, যমুনা টিভি, রাইজিং বিডি, একাত্তর টিভি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন। পাশাপাশি ২টি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে চ্যানেল আই, নাগরিক টিভি, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, মানবকন্ঠ, কালবেলা, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, নিউজ ২৪, মানবজমিন, বাংলা ভিশন, সংবাদ প্রকাশ, সারাবাংলা ডট নেট ও বাংলাদেশ জার্নাল। আর একটি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে বৈশাখী টিভি, দৈনিক আমাদের সময়, সাম্প্রতিক দেশকাল, ঢাকা মেইল, দেশ টিভি, নিউ ন্যাশন, দেশ রুপান্তর, বাংলাদেশ টুডে, ভোরের কাগজ, সময়ের আলো, নিউজবাংলা, দৈনিক বাংলা, যায়যায়দিন, দৈনিক সংগ্রাম, ভোরের ডাক, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, এনটিভি, নয়া শতাব্দী, বায়ান্ন টিভি ও বিবিএস বাংলা।
তবে বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবাদ মাধ্যমের নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ, মূলধারার সাংবাদিকতায় তুলনামুলকভাবে কম পরিচিত কিংবা মূলধারার সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত নয়- এমন অনলাইন পোর্টালকে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের মধ্যে ধরা হয়নি। আর পরিসংখ্যানের সুবিধার্থে প্রতিবেদনে গণমাধ্যমে চিহ্নিত ভুল খবর, খবরের সঙ্গে ভুল ছবি প্রকাশ কিংবা আংশিক ভুল, মিসিং কনটেক্সটসহ সবগুলোকেই ভুয়া খবর হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।