https://www.a1news24.com
১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৫:৩৩

বিসিবির ‘চিরুনি অভিযান’, খুঁজে বের করলো ৮০ লেগ স্পিনার

স্পোর্টস ডেস্ক: গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটেই সবচেয়ে চর্চিত বিষয় এটি। স্কুল ক্রিকেটে আলো কেড়ে এখন জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছেন লেগ স্পিনার শাইখ ইমতিয়াজ শিহাব।

এই ক্রিকেটারের কথা টেনে এনেই লেগ স্পিনারদের কথা এসেছিল। স্কুল ক্রিকেটে সফল হলেও শীর্ষস্তরে খুব বেশি সুযোগ পাচ্ছেন না লেগ স্পিনাররা।

কেন? এই প্রশ্নের উত্তরেই বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছেন, স্পিনার খুঁজতে ক্যাম্প করছেন তারা। পাকিস্তানি লেগ স্পিনার শাহেদ মাহমুদের তত্ত্ববধানে হচ্ছে এই ক্যাম্প।

ক্রিকেটে খুব পরিচিত নাম না হলেও একসময় ঢাকা লিগে নিয়মিত খেলছিলেন তিনি। তাকে দিয়ে পুরো দেশ ঘুরিয়ে লেগ স্পিনার খুঁজেছেন বলে জানিয়েছেন সুজন।

তিনি বলেন, ‘লেগ স্পিনার নিয়ে আমাদের বাড়তি চিন্তা আছে। ডেভেলপমেন্টে শাহেদ মাহমুদ আছে লেগ স্পিনার কোচ হিসেবে। আপনারা হয়তো জানেনও না, আমরা জানাইনি, গত আট মাস ধরে উনি আমাদের সঙ্গে আছেন। ইতোমধ্যেই অনেক লেগ স্পিনার খুঁজে বের করেছি আমরা। ৮০ জন খুঁজে বের করেছি। শাহেদ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে গিয়েছে। রংপুর, ফরিদপুর,রাজশাহী, ওখানে গিয়ে কাজ করে আমরা ট্যালেন্টগুলোকে বের করেছি। ’

শুধু খুঁজে বের করেই থেমে যাচ্ছে না বিসিবি। তাদের নিয়ে আগামী মে মাসের শুরুতে ক্যাম্প হবে। সেখান থেকে বেছে নেওয়া হবে সেরা বিশ জনকে। তাদের নিয়ে পরবর্তীতে ক্যাম্প করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন বিসিবির গেম ডেভলপমেন্ট চেয়ারম্যান।

সুজন বলেন, ‘শিগগিরই আমরা ২ ভাগে ভাগ করে ৪০ জন করে ৮০ জনের সঙ্গে ক্যাম্প শুরু করব। ২ ও ৩ মে এই ক্যাম্প শুরু করব। ওখান থেকে আমরা সিলেকশনটাকে আরও ছোট করব, সেখান থেকে ২০ জনে এনে আমরা প্রায়োরিটাইজ করব। আমাদের বিসিবির ভাবনায় যে নেই বিষয়টা এমন নয়। ’

এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লেগ স্পিনারদের সুযোগ কম পাওয়া প্রসঙ্গে সুজন বলেন, ‘এখনও হয়ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলার মতো স্ট্যান্ডার্ড হয়নি। সেজন্যে অনেক ছেলে খেলতে পারছে না। আমি আরেকটা কথা বলি, ঢাকার প্রথম, দ্বিতীয় বিভাগে কেউ লেগ স্পিনার খেলাতে চায় না। লেগ স্পিনাররা একটা বাজে বল করে ছয় খায়, সেটা কেউ মানতে চায় না। আপনি যদি সেকেন্ড থার্ড ডিভিশন ফলো করেন, ওখানে স্পিনাররা দশ ওভারে ১৮ রান দেয়। ওখানে বাঁহাতি স্পিনারদের ডমিনেশন থাকে। ওখানে তারা খেলাতে চায় না। ’

‘আমাদের ক্লাব অফিসিয়ালদের বুঝতে হবে একটা লেগ স্পিনার একটা ম্যাচ উইনার। আপনি যদি রিশাদকে দেখেন, ওকে তিন বছর আগে কেউ খেলাতে চাইত না। গত বছর সে আমার সঙ্গে আবাহনীতে ছিল। আবাহনী যেমন স্ট্রং দল সেখানে তার খেলা কঠিন। আমি ওকে শাইনপুকুরে পাঠিয়ে বলেছি তুই শাইনপুকুরে খেল, ওই ক্লাবকে আমি একটা কথা বলেছি, সে যেন নিয়মিত খেলে। এই শর্তে তাকে ছাড়তে রাজি হয়েছি। সে কিন্তু ১০ ম্যাচে ২৩ উইকেট পেয়েছে। অনেক ম্যাচ জয়ের অবদান ছিল। লেগ স্পিনার যে ম্যাচ উইনার, এটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। ’

সুজন আরও বলেন, ‘আমি ক্লাব অফিসিয়ালদের বলব, আপনারা লেগ স্পিনারদের সুযোগ দেন, ওরা হয়তো এক ম্যাচে খারাপ করবে, কিন্তু ওই লেগ স্পিনার আপনার ম্যাচ উইনার হবে। এটা আমাদের বিসিবির যেমন দায়িত্ব তাদের ডেভেলপ করা, বিসিবি কিন্তু ক্লাব ক্রিকেট খেলে না, খেলে ক্লাবগুলো, তাদের আগ্রহটা থাকতে হবে। সুযোগটা কিন্তু তাদেরই দিতে হবে। সুযোগ দিলে তাদের জন্য ফল বয়ে আনবে লেগ স্পিনাররা।’

বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটে লেগ স্পিনাররা দাপট দেখালেও বাংলাদেশে লেগ স্পিনারের রয়েছে বড় সংকট। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন লেগ স্পিনারের দেখা মিললেও তা যথেষ্ট নয়। দীর্ঘ সময় সার্ভিস পাওয়ার মতো একজন লেগ স্পিনারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ দল। সেই লক্ষ্যে বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটি সারাদেশে চিরুনি অভিযান চালিয়ে খুঁজে বের করেছে ৮০ লেগ স্পিনারকে। পাকিস্তানের শাহেদ মেহমুদের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয় ।

বিসিবি দেশের ৬৪ জেলা থেকে হান্ট করেছে ৮০ জন লেগস্পিনার। শাহেদ মেহমুদ জেলা ও বিভাগে ঘুরে ঘুরে খুদে লেগ স্পিনারদের বাছাই করেছেন। গত ছয় মাস দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে একশোর মতো লেগ স্পিনারের তালিকা করেছিলেন মেহমুদ। সেখান থেকে ট্রায়ালে ডাকা হচ্ছে ৮০ জনকে। ৩ ও ৪ মে মিরপুরের একাডেমি মাঠে ট্রায়াল হবে। ট্রায়াল থেকে ২০ জন বোলারকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হবে। তিন সপ্তাহের স্কিল ক্যাম্পের পর ১২ থেকে ১৫ জন নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

বিসিবির গেম ডেভোলাপমেন্ট চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘লেগ স্পিনার নিয়ে অবশ্যই আমাদের বাড়তি চিন্তা আছে। ডেভেলপমেন্টে শাহেদ মেহমুদ আছেন লেগ স্পিন কোচ হিসেবে। এরই মধ্যে আমরা অনেক লেগ স্পিনার নিয়ে ট্যালেন্ট হান্ট করেছি। ৮০ জনকে খুঁজে বের করেছি। শাহেদ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে গিয়েছে। রংপুর, ফরিদপুর, রাজশাহী… সব জায়গায় গিয়ে কাজ করে ট্যালেন্টগুলো বের করে এনেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখন অনেক লেগ স্পিনার উঠে এসেছে। আগে যথাযথ যত্নের অভাব ছিল, এজন্য লেগ স্পিনার কোচ আমরা একজন নিয়েছি ডেভেলপমেন্টে। মুশতাক ভাই আমাদের জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। উনি যদি বেশি সময় আমাদের সঙ্গে থাকেন, তাহলে এখান থেকে বেশ কয়েকজন লেগ স্পিনার পাওয়া যাবে।’

আরো..