এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের উপকূলে অবস্থিত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা সহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ৯টি উপজেলায় সিডর ও আইলা ক্ষতিগ্রস্থ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার সর্বত্র প্রচন্ড খরতাপ ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবনসহ প্রাণীকুল অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। জ্যৈষ্ঠর এই গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ঘরে বৈদ্যুতিক ফ্যানের বাতাসেও যেনো আগুনের হাওয়া বইছে। কোথাও একটু স্বস্থি নেই। অপরদিকে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তাই এখানের হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশকিছু দিন ধরে তাপদাহে পুড়ছে সারাদেশ। গ্রীষ্মের তপ্তরোদ ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে প্রাণীকুলের জীবন। মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে দুপুরে রোদে ঘরের বাইরে চলাচলকারীদের শরীরও মুখমন্ডল জলতে থাকে। ঘরের বাইরে তাকালেই চোখ বন্ধ হয়ে আসে। ঘরে ফ্যানের বাতাসেও যেনো আগুনের হাওয়া বইছে। কোথাও একটু স্বস্থি নেই। বৈশাখের এই গরমে রোজাদারদের প্রান উষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। তেষ্ঠায় বুক গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকে এই তীব্র খরতাপ ও ভ্যাপসা গরম থেকে একটু স্বস্থি পেতে দুই থেকে তিন বার গোসল করছেন। তীব্র খরায় গাছ-গুল্ম-লতাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই এখানের হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ভূক্তভোগীরা জানান, পানির অপর নাম জীবন হলেও এই পানি এখন এ উপজেলার মানুষের বিপদ ডেকে আনছে। চারদিকে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার চলছে। পানির জন্য কলসি হাতে দূর-দূরান্তে ছুটছে মানুষ। সুপেয় পানির সংকট এ অঞ্চলের মানুষদের নিত্যদিনের সমস্যা। গত কয়েক বছর ধরে এ সমস্যা চলে এলেও এটি স্থায়ী সমাধানের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেও তাদের অভিযোগ।
তারা আরও জানান, এলাকার বেশিরভাগ নদী-খাল ও পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় কোথাও গোসল এবং খাবারের পানি মিলছে না। ফলে লোকজনকে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েল ও নোংড়া পুকুরের পানি পান করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষজন এ পানি পান করে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভুগছেন। এছাড়া এখানকার বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টে সুপেয় পানির অভাবে বিভিন্ন পুকুর ও খালের দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। যেটি পান করার অযোগ্য। বিভিন্ন লোক ভ্যানযোগে পুকুর থেকে এসব পানি তুলে এনে বিক্রি করছে হোটেল-রেস্তরাঁয়। পানির এ প্রকট সমস্যায় লোকজন দিশাহারা হয়ে উঠেছেন।
বারইখালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জানান, এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য বারইখালী ইউনিয়ন ও নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন ইউনিয়নে হাই-সাওয়া নামে দুটি পাম্প রয়েছে। তবে পাম্প এখন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় জনসাধারণ ও বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে পন্ডস স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ), রেইন ওয়াটার হার্বেস্টিং (আরডবি¬উএইচ) বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য সহায়তা করলেও তার পরিমান সীমিত। যে সব পুকুরে পিএসএফ স্থাপন করা হয়েছে, তার অধিকাংশ পুকুরে বর্তমানে পানি কম থাকায় এর সুফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম জানান, জানান, উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের সরকারিভাবে ৭০টি ও বেসরকারিভাবে ১৬ শ’ পানীয় জলের পুকুর রয়েছে। পিএসএফ রয়েছে প্রায় ১ হাজার। এর মধ্যে ১’শ টি চালু রয়েছে।
অকেজো রয়েছে ৪ শতাধিক। ১০টি গভীর নলকূপের মধ্যে জিউধরা ইউনিয়নে একটি চালু রয়েছে। রেইন ওয়াটার হার্বেষ্টিং প্লান্ট রয়েছে ১’শ টি। সদর ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামে চালু রয়েছে একটি রিংওয়েল (পাত কুয়া)। স্যালো টিউবয়েল রয়েছে ৩ হাজার ৬ শ’ ৭০ টি। জরিপ অনুযায়ী স্যালো টিউবয়েল অকেজো রয়েছে ২ হাজার। পঞ্চকরণ ইউনিয়নে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কথা থাকলেও তার কোন হদিস নাই।
উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আরো জানান, ১৬ ইউনিয়নে আর্সেনিক জরিপে ২০০৩ সালের আর্সিনিক জরিপ অনুযায়ী উপজেলা সব ইউনিয়নে কম বেশী আর্সেনিক চিহিৃত টিউবওয়েল রয়েছে। তবে বনগ্রাম ,হোগলাবুনিয়া, হোগলাপাশা ইউনিয়নের আর্সেনিক চিহিৃত টিউবওয়েল রয়েছে সবচেয়ে বেশি ও ভয়ানক আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে এ ইউনিয়নটি। এলাকায় মাটির প্রায় ৮০০ ফুট গভীর ভেদ করে বালুর যে স্তর পাওয়া যাচ্ছে তাতে লবণাক্ততা বেশি। মাটির নিচে সুপেয় পানির আধার পেতে কষ্ট হয়। নলকূপের পানিতে মাত্রারিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। এ উপজেলার ২০ ভাগ এলাকায় গভীর নলকুপ হয়। বাকি ৮০ ভাগ এলাকায় গভীর নলকুপ বসে না। তারপরও পানির চাহিদা মেটাতে সরকার বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাগেরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির জানান,গত কয়েকদিন ধরে সিডর ও আইলা ক্ষতিগ্রস্থবাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা সহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ৯টি উপজেলায় তাপমাত্রা বাড়তেই আছে। এতে করে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমের কারণে সবচেয়ে বিপদে আছেন সাধারন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। তাদের দুর্দশার শেষ নেই। এছাড়া খরায় পুকুর ও খাল-বিলের পানি শুকিয়ে তলায় ঠেকেছে। এতে পানিতে জীবানুর পরিমান অনেক বেশী থাকায় এই পানি ব্যবহারের ফলে মানুষ বিভিন্ন রকম পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: সাইফুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরে মোরেলগঞ্জে প্রচন্ড খরতাপ ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবনসহ প্রাণীকুল অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তীব্র খরায় সবজি, গাছপালা ও গুল্ম-লতাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ডা. কামাল হোসেন মুফতি জানান, বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভ্যাপসা গরমে ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। সুস্থ্য থাকতে সবাইকে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। সেই সাথে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান ও পানীয় জাতীয় ফলমুল বেশী খেতে হবে।