বিনোদন প্রতিবেদক: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন-১৯৮৯’র অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়ায় ‘নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র’ উপবিভাগ থেকে ‘চলচ্চিত্র’ বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১৭৫ বিশিষ্টজন। শিল্পকলা একাডেমিতে পৃথক চলচ্চিত্র বিভাগ চান চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টরা।
চলচ্চিত্র সমালোচক-গবেষক-শিক্ষক ফাহমিদুল হকের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন, ১৯৮৯-এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ-এর খসড়া তাঁদের দেখার সুযোগ হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন সময়ে এই নবজাগরণকে সবচেয়ে ভালোভাবে ধারণ করতে পারে চলচ্চিত্র। শিল্পকলার অন্যতম শাখা চলচ্চিত্রকে একাডেমি থেকে বাদ না দিয়ে বরং স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করা হোক। কারণ, জাতির বর্তমান প্রত্যাশা ও প্রয়োজনকে ছোট-বড় প্রামাণ্য, ফিচার ইত্যাদি নানাধর্মী চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ধারণ করবেন যে নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা, তার পৃষ্ঠপোষকতা বাণিজ্যিক আবহ করবে না। জাতীয় প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমিই সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে। একাডেমির সব জেলার শাখাগুলোয় এসব চলচ্চিত্রের ধারাবাহিক প্রদর্শন চলতে থাকবে। এটাই চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের আকাঙ্ক্ষা।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘শিল্পকলা একাডেমিতে চলচ্চিত্রবিষয়ক কার্যক্রমের বিষয়টি স্বাধীনতার পর থেকেই রয়েছে। ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালের আইনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পাঁচটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এই পাঁচটি বিভাগ হলো চারুকলা বিভাগ, নাট্যকলা বিভাগ, সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগ, চলচ্চিত্র (সিনেমাটোগ্রাফি) বিভাগ, গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগ। অর্থাৎ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শুরু থেকেই পৃথক ‘চলচ্চিত্র বিভাগ’ ছিল। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সরকার ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন রহিত করে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন ১৯৮৯’ জারি করে। ১৯৮৯ সালের এই আইনে চলচ্চিত্র বিভাগ বাদ দেওয়া হয়। এই আইনে চলচ্চিত্রকে বাদ দেওয়ার বিরোধিতা করে চলচ্চিত্র কর্মীরা প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পরিষদ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন ১৯৮৯–এর ৮ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারার অধিকার বলে চলচ্চিত্রকে নাট্যকলা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করে। ‘নাট্যকলা ও চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভাগ’ গঠন করে চলচ্চিত্রবিষয়ক তৎপরতা পরিচালনা করে আসছে একাডেমি। অর্থাৎ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু থেকেই ‘চলচ্চিত্র’ তার অংশ হয়ে আছে। তাই ঐতিহ্য ও অধিকারের বিচারে, আজকেও শিল্পকলা একাডেমি থেকে চলচ্চিত্রকে বিদায় করে দেওয়ার সুযোগ নেই।’’
বলা হয়, ‘চলচ্চিত্র একটি সমন্বিত শিল্পকলা। সব মাধ্যম থেকে ধার করে বিংশ শতাব্দী থেকেই চলচ্চিত্র অন্যতম শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম হয়ে উঠেছে। একটা যুক্তি বরাবরই ছিল, চলচ্চিত্র দেখার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় আছে। তথ্য মন্ত্রণালয় দেখে চলচ্চিত্রের কারখানা (এফডিসি), সেন্সর ও সনদ, প্রশিক্ষণ (বিসিটিআই), সরকারি তথ্যচিত্র (ডিএফপি), চলচ্চিত্রের আর্কাইভ। কিন্তু এত কিছু থাকার পরও স্বাধীনতার পর থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে চলচ্চিত্র উপবিভাগ ছিল। কারণ, শিল্পকলা বা আর্ট হিসেবে চলচ্চিত্রকে দেখার কোনো প্রতিষ্ঠান তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল না। তাই শিল্পকলা একাডেমিতে বহু বছর ধরেই চলিচ্চত্রের শিল্পকলার দিকটি চর্চিত হয়ে আসছে। এখানে চলচ্চিত্রবিষয়ক ওয়ার্কশপ, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, পাঠচক্র আয়োজিত হয়েছে। চলচ্চিত্র কার্যক্রম সীমিত আকারে হলেও সারা দেশে একাডেমির সব শাখায় চালু হয়েছিল। এমনকি চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টরা এ রকমও প্রস্তাব দিয়ে রেখেছিলেন যে একাডেমির সব শাখায় মিনি মাল্টিপ্লেক্স গড়ে তুলতে, তাতে প্রেক্ষাগৃহের সংকট কমবে।’
বিবৃতিদাতারা বলেন, তাঁরা আশা করছেন, নবনিযুক্ত সংস্কৃতি উপদেষ্টা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি তাঁরা এও দাবি করছেন, নতুন সময়ের দাবি ও প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার সংস্কৃতি নীতিমালারও প্রয়োজনীয় পরিমার্জনা করবে।
গণামধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সই করা নির্মাতা ও প্রযোজকদের মধ্যে রয়েছেন তাসমিয়াহ আফরিন মৌ, নূরুল আলম আতিক, আবু সাইয়ীদ, এন রাশেদ চৌধুরী, আকরাম খান, শবনম ফেরদৌসী, টোকন ঠাকুর, নোমান রবিন, ওয়াহিদ তারেক, প্রসূন রহমান, রেদওয়ান রনি, খিজির হায়াত খান, পলাশ রসুল, তানিম নূর, খন্দকার সুমন, শঙ্খ দাশগুপ্ত, লিটন কর, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, মোহাম্মদ আলী হায়দার, এহসানুল হক বাবু, উত্তম কুমার সিংহ, হুমায়ুন কবীর শুভ, পার্থ সেন গুপ্ত, আরিফ সনেট, মানস মেহেদী, আদনান বাঙালী, আসাদ জামান, সুকর্ণ শাহেদ ধীমান, ধ্রুব হাসান, আদনান হাবিব, মো. আবুল কালাম আজাদ, তানহা জাফরীন, শ্যামল শিশির, ইয়াছির আল হক, ফরিদ আহমদ, জায়েদ সিদ্দিকী, রিয়াজুল রিজু, ফেরদৌস কোরেশী, স্বজন মাঝি, জাহিদ হাসান, শারমিন দোজা, কামরুল হাসান, শুভ্র খান, শাহ তুষার, অন্তু আজাদ।
টেকনিশিয়ান (চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক, শব্দগ্রাহক ইত্যাদি) মধ্যে রয়েছেন রতন পাল, তানভীর আলম সজীব, চৈতালী সমদ্দার, নাভিদ খান চৌধুরী। সমালোচক-গবেষক-শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ফাহমিদুল হক, আ-আল মামুন, বিধান রিবেরু, ইমরান ফিরদাউস, আমিরুল রাজিব, ওয়াহিদ সুজন, ড. সেলিম মোজাহার, সাদিয়া খালিদ রীতি, জাহিন ফারুক আমিন, ধ্রুব সাদিক, মো. সাজেদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আনান সিদ্দিকা, শেখর দাশ, সাইয়্যিদ শাহজাদা আল কারীম, ড. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।
চলচ্চিত্রকর্মী বা সংগঠকদের মধ্যে রয়েছেন মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, তারেক আহমেদ, কাজী মামুন হায়দার, ড. সাজ্জাদ বকুল, মোহাম্মদ রোমেল, রাকিবুল হাসান, মেহেদী হাসান, ইব্রাহিম খলিল, আবদুর রহমান, লোকপ্রিয় বড়ুয়া, বৈশাখী সমদ্দার, সৈয়দ ইমরান হোসেন কিরমানী, আনন্দ কুটুম।
অভিনয়শিল্পী ও সংগীতশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন জাকিয়া বারী মম, রওনক হাসান, দীপক সুমন, সোহেল মণ্ডল, নাহিদা শারমিন (শর্মীমালা), আবদুল্লাহ আল সেন্টু, তানভীর আহমেদ। রয়েছেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন।