নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়েক দিন ধরে চলা তাপদাহের মধ্যেই দেশের কয়েকটি অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি হয়েছে। এতে বরিশাল বিভাগের তিন জেলায় ঝড়ে ও বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েকজন। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকশ বাড়িঘর।
রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে এই ঝড় হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। আজ প্রায় সব বিভাগেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি পর্যন্ত কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে নিহত ৩
ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা ( ১১)। রোববার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সদর ও কাঠালিয়া উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে। ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত হেলেনা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে। মিনারা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট গ্রামে ও মাহিয়া আক্তার ঈশানার বাড়ি পোনাবালিয়া গ্রামে।এর মধ্যে হেলেনা বেগম ও মিনারা বেগম গৃহিণী এবং মাহিয়া আক্তার ঈশানা আফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
পোনাবালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.ফারুক হোসেন খান বলেন, ভ্যানচালক বাচ্চুর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। আমরা ইউনিয়নবাসী এমন ঘটনায় গভীর শোকাহত।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় এক শিশু ও নারী এবং কাঠাঁলিয়া উপজেলায় এক নারী নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করা হবে।
পটুয়াখালীতে ঝড়ে নিহত ২
পটুয়াখালীর বাউফলে কালবৈশাখী ঝড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই ঝড় হয়। নিহতরা হলেন রাতুল (১৪) ও সুফিয়া বেগম (৮৫)।
নিহত রাতুল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর সুফিয়া বেগম দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী। ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান।
এ ছাড়া গোসিংগা গ্রামের আফসেরের গ্রেজ এলাকায় ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে মা সাবিহা (৩০), তার মেয়ে ইভা (১২) ও দুই বছর বয়সী আরেক শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে।
পিরোজপুরে ঝড়ে একজনের মৃত্যু, লণ্ডভণ্ড বাড়িঘর
পিরোজপুরে ১০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে কয়েকশ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় রুবি নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ৯টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত চলে এ ঝড়।ঝড়ে মারা যাওয়া ওই গৃহবধূ রুবি সদর উপজেলার মরিচাল এলাকার বাসিন্দা। এ সময় তার শিশুসন্তানও গুরুতর আহত হয়।
এদিকে ঝড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ। গাছপালা ভেঙে পড়ে পিরোজপুরের সঙ্গে বরিশালের সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে হঠাৎ চতুর্দিকে কালো মেঘ ঢেকে যায়। কিছু সময় পর তীব্র বেগে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে কয়েকশ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঝড়ে অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে টিনের চালা উড়ে যায়। ধানক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। সড়ক-ঘরবাড়ির ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কয়েক মিনিটের ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ঝড় থেমে যাওয়ার পর স্থানীয়রা সড়ক থেকে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে নিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত রুবি নামের একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।