অনলাইন ডেস্ক: নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর শঙ্কা বরাবরই বেশি। তবে লিঙ্গভেদে হৃদরোগের ঝুঁকির তারতম্য রয়েছে। নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ও প্রতিকারের ক্ষেত্রও আলাদা। নারীর জীবনে হৃদরোগের শঙ্কা অনেক বেশি বলে সম্প্রতি একটি গবেষণা জরিপ জানিয়েছে। ফলে হৃদরোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত হওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির বিষয়টি নিয়ে বিশেষ মনোযোগ দেয়া জরুরি। আজকের লেখায় মূলত এই লক্ষণ ও এ বিষয়ে সচেতনতার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি কেন বেশি এ বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা জরুরি।
নারীর রক্তনালিকা ও হৃদপিণ্ড ছোট: নারীদের হৃদপিণ্ড আর রক্তবাহী নালিকা পুরুষদের তুলনায় ছোট। ফলে নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে বেশি। অনেক সময় নারীদের রক্তবাহী নালিকা এতটাই ছোট হয়ে থাকে যে তাদের শিরায় কোনো ব্লকেজ থাকলে তা এনজিওগ্রামে ধরা পড়ে না। এনজিওগ্রামে ধরা পড়েনা বিধায় নারীদের আকস্মিক কোনো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে বেশি।
এন্ডিমেট্রিওসিস রয়েছে যাদের
যে নারীদের এন্ডিওমেট্রিওসিস রয়েছে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি তিনগুণ বেশি হয়ে থাকে। নারীর প্রজনন-স্বাস্থ্যের সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস যাদের রয়েছে তাদের জন্য বিষয়টি আরও ঝুঁকির। নারীর গর্ভধারণকালে কিংবা জটিল ধরনের গর্ভধারণের সময়ে হৃদরোগের সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন চিকিৎসা গবেষকরা। এ ধরনের গর্ভধারণ নারীর শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলায় গর্ভজনিত ঝুঁকি অনেক বেশি হয়ে থাকে।
নারীর হৃদরোগের ঝুঁকির লক্ষণ
নারীর হৃদরোগের লক্ষণ বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব রয়েছে। কারণ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে যত গবেষণা হয়েছে তার অধিকাংশই পরিচালিত হয়েছে পুরুষের ওপর। ফলে নারীর হৃদরোগ-ঝুঁকির বিষয়টি একেবারেই আলাদা। সচরাচর হৃদরোগ হলে নারীও বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তবে তাদের হৃদপিণ্ডে ফ্লুয়ের ন্যায় রোগের লক্ষণ বেশি দেখা দিতে শুরু করে। অনেকের ঘন ঘন বমি, মাথা ঘোরানো, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যাও দেখা দেয়। এসবই হৃদরোগের কিছু লক্ষণ যা অনেকে ফ্লু ভেবে বসেন। তবে হৃদরোগ বাদেও অনেকটা কাছাকাছি ধরনের কিছু রোগও নারীর মধ্যে দেখা দিতে পারে। যেমন—
করোনারি স্পাজম: এই ধরনের সমস্যায় নারীর হৃদপিণ্ডে যে ধমনী রক্ত সরবরাহ করে সেটি সংকুচিত হয়ে যায়। এভাবে হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং অনেকাংশে হৃদরোগের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
করোনারি ডিসেকশন: করোনারি আর্টারি ছিঁড়ে গেলে এই সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যা ঐ নারীদের হয় যাদের পূর্বে কোনো হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ছিল না।
টাকোতসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি: এটি মূলত প্রদাহজনিত সমস্যা। হৃদপিণ্ডে প্রদাহজনিত সমস্যার কারণে অনেক সময় হৃদরোগের এই ধরনের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
এই তিনটি কন্ডিশন অনেকটা হার্ট অ্যাটাকের মতো। তবে হার্ট অ্যাটাকের থেকেও এই কনডিশনগুলোর পরিণতি বাজে হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। যখনই এমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় বা তার আগে সন্দেহ হয় তখন অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
চিকিৎসা
সচরাচর নারীর হৃদরোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ওষুধ নিতে হবে। ব্লাড প্রেশার আর লোয়ার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এমন ওষুধই মূলত চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন। নারীদের বেবি অ্যাসপিরিনও দেয়া হতে পারে। যেহেতু এ বিষয়ে এখনও পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব রয়েছে তাই এ বিষয় নিয়ে এখনই কিছু বলা কঠিন। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে গবেষণা বাড়তে শুরু করেছে। আবার কারও যদি হৃদরোগ শনাক্ত হয় তাহলে করোনারি আর্টিনারি বাইপাস সার্জারিও করা হতে পারে। হার্টে কোনো ব্লকেজ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এখন নানা পরীক্ষা-পদ্ধতি চালু রয়েছে। দ্রুততম সময় তা শনাক্ত করতে পারলেই হয়।
পরীক্ষা করা হয় কিভাবে?
কার্ডিয়াক ট্রপোনিন নামক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে মূলত পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে ট্রপোনিন পরীক্ষা করা হয়। ট্রপোনিন এক ধরনের প্রোটিন। এই প্রোটিন হৃদপিণ্ডের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের শরীরে তৈরি হয়। নারীর শরীরে এই প্রোটিন কম থাকলে তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়—অন্তত চিকিৎসকরা এমনটিই দেখেছেন।