নিজস্ব প্রতিবেদক: জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেই ইস্যু পরিবর্তনে অপকৌশল হিসেবে সরকার এটা করছে বলে দাবি বিএনপি মহাসচিবের। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘সরকার একটা ইস্যুকে ডাইভার্ট করার জন্য আরেকটা ইস্যু সামনে নিয়ে আসে। বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। পাকিস্তান আমলেও কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। স্বৈরাচার সরকাররা এ ধরনের (রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ) সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নিয়ে থাকে। এ দেশে জঙ্গিবাদের বড় পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
এসময় অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে নৈরাজ্য হয়েছে এর জন্য দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। এই সরকার রাষ্ট্রঘাতী, প্রাণঘাতী, গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ফখরুল বলেন, ‘কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে গণবিরোধী আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী কায়দায় গণহত্যা ও দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সারা দেশ আজ অগ্নিগর্ভ। আজকেও এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। গতকালও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, লাঠিচার্জ, গ্রেফতার, নির্যাতন চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভেও সরকার পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ন্যক্কারজনকভাবে বাধা দিয়েছে এবং হামলা চালিয়ে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে শতাধিক নিরীহ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের একত্রিতও হতে দেয় নাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পাহারার নামে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডার জমায়েত করে ভীতিকর ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল সরকার। দেশে জরুরি অবস্থা জারি না করা সত্ত্বেও সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভ না করতে দেওয়া এবং হামলা-গ্রেফতার করা সরকারের অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিরাপত্তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্যান্য সমন্বয়কদের হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে তুলে এনে তাদের ওপর বল প্রয়োগ করে ডিবি কার্যালয়েই নজিরবিহীনভাবে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দিয়ে তাদের দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করানোর নাটক সাজানো হয়েছে। ডিবি হেফাজতে রেখে সমন্বয়কদের ওপর চাপ দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণার নাটক সাজানো হলেও সাধারণ ছাত্রদের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ছিল না। সরকার কত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে, তা ডিবি হেফাজতে আটক রাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর বল প্রয়োগ করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করার ঘটনায় অনুমান করা যায়। ডিবি কার্যালয়ে তাদের হেফাজতে রেখে বল প্রয়োগ করে ছাত্র আন্দোলন বন্ধ করতে চায় সরকার।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সরকারের বর্বরতা বিশদভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট নয়, সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এর জন্য দায়ী একমাত্র সরকার, যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে গিয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে নিরপরাধ মানুষ, ছাত্র, যুবক, নিষ্পাপ শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রাজনীতিকে উন্মুক্ত করা, নিষ্ঠুর দমন নিপীড়ন বন্ধ, গ্রেফতার নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।’