নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, দুর্নীতি দুর্নীতিই, আমার দুর্নীতি হোক বা পিয়নের দুর্নীতি হোক। দুর্নীতি দূর হোক। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে জাতীয় সংসদকে ১৬ দফা পরামর্শ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল শুনানির এক পর্যায়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। পরে ওই মামলায় চেম্বার জজ আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখে আপিল করার অনুমতি দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
১৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিতাস গ্যাসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান সরকার ও টেকনিশিয়ান আব্দুর রহিমের সাজা বাতিলের রায়ে ওই ১৬ দফা পরামর্শ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এ রায় দেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও আসামি পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানি করেন।
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, দেশের স্বার্থে হাইকোর্ট দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ১৬ দফা পরামর্শ দিয়েছেন। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সংসদকে পরামর্শ দিতে যাব কেন? আমরা কি সংসদকে পরামর্শ দিতে পারি? হাইকোর্ট নির্বাহী বিভাগকে ও সরকারকে নির্দেশনা দিতে পারেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতি চাইলে পরামর্শ দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতি চাইলে সেই পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, নাও পারেন।
দুর্নীতির বিষয়ে শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, গত রাতে আমরা হাইকোর্টেও দুই কর্মচারীকে ধরে পুলিশে দিয়েছি। তারা বিচারপতির নাম ভাঙিয়ে ঘুষ নিয়েছিলো। দুর্নীতি দুর্নীতিই, আমার দুর্নীতি হোক বা পিয়নের দুর্নীতি হোক। দুর্নীতি দূর হোক।
কোটা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের উদ্দেশে ওবায়দুল হাসান বলেন, আপনারা তো সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতা, আপনাদের দেশের প্রতি দায়িত্ব আছে। যারা কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে, তাদেরকে বোঝান, পরামর্শ দিন। বিষয়টি আদালতের সামনেই আসবে এবং আদালতেই নিষ্পত্তি হবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর গতকাল (বুধবার) এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা বলেছেন, এ দাবি নির্বাহী বিভাগ থেকে যতক্ষণ না পূরণ করা হবে ততক্ষণ আমরা রাজপথে থাকব।
আন্দোলনকারীদের দাবি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদেরকে পরামর্শ দিন, তারা কেন নির্বাহী বিভাগের কথা বলে? নির্বাহী বিভাগের যে কোনও সিদ্ধান্ত তো আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) আপিল বিভাগে একটি মামলার শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্টের নেতাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, আমরা কোনো ‘ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত মানতেছি না’।
তিনি বলেন, আমাদের এক দফা দাবি ‘সংসদে আইন পাশ করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম (সর্বোচ্চ ৫শতাংশ) কোটা রেখে সকল ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে।’