নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রভাব বিস্তার ও কোন্দলের আশঙ্কায় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের নির্বাচনে প্রার্থী না হতে নির্দেশনা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমপিদের অধিকাংশ স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ২০টি স্থানে এমপিদের ২৯ জন স্বজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী এমপিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বসবেন তাঁরা। সেখানে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে দলীয় কৌশল ঠিক করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে উপজেলা নির্বাচনের বিষয়টি অ্যাজেন্ডায় থাকবে। যেসব এমপি দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি, তাঁদের জন্য আমাদের কী করণীয় সেটা আসবে।
এদিকে দলের সভানেত্রীর নির্দেশনা যেসব মন্ত্রী-এমপি মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে সোমবার (২২ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, তাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা প্রার্থী হতে চান, তাদেরও নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যারা আছেন তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল, মাগুরার শালিখা উপজেলা থেকে এমপি বীরেন শিকদারের ছোট ভাই বিমলেন্দু শিকদার। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় প্রার্থী হয়েছিলেন স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী। ছেলের সমর্থনে মা ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় হওয়ার পথে এমপিপুত্র আশিক আলী।
তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এমপি একরামুল করীম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক চৌধুরী, মাদারীপুর সদরে শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে এমপি সাহাদারা মান্নানের ছেলে শাখাওয়াত হোসেন ও সোনাতলায় এমপির ভাই মিনহাদুজ্জামান।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় স্থানীয় এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শাহাবউদ্দিনের ভাগনে সোয়েব আহমদ, নরসিংদীর পলাশের এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের স্ত্রীর বড় ভাই শরীফুল হক, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর এমপি মাজহারুল ইসলামের দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় ভোটের মাঠে থাকছেন এমপি আলী আজগর টগরের ভাই আলী মুনসুর। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুনার রশীদ হীরা ও মামাতো ভাই খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।
সিরাজগঞ্জ সদরে প্রার্থী রয়েছেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি তানভীর শাকিল জয়ের চাচাতো ভাই রাশেদ ইউসুফ জুয়েল। পাবনার বেড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন এবং ভাতিজা আব্দুল কাদের সবুজও ভোটে থাকছেন। পিরোজপুরের নাজিরপুরে প্রার্থী আছেন এমপি শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এস এম নূরে আলম সিদ্দিকী।
এর আগে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় ও নিজস্ব লোক উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং এমনকি তারা কারও পক্ষে কাজও করতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের এ ব্যাপারে নির্দেশনাও দিয়েছেন। এরপরও কেউ ভোট থেকে সরে না দাঁড়ালে বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
আওয়ামী লীগের দপ্তর শাখা জানায়, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
দলীয় প্রধানের নির্দেশনা পেয়ে ওবায়দুল কাদের অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠক করেন। বৈঠকে এ ধরনের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয় এবং পরে তা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়। এতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ও উপ-দপ্তর সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, তার তালিকা তৈরিরও নির্দেশ দেন।