নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে আহসান হাবিব নামে এক স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। আহসান হাবিব যশোর সদর উপজেলার আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এজেডএম পারভেজ মাসুদ জানান, সকালে মাঠে কাজ বিদ্যালয়ে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন আহসান হাবিব। দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, আজ সকালে ওই শিক্ষককে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের ধারণা, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারেন। তবে আমরা এখনো চূড়ান্ত রিপোর্ট পাইনি। আর তার স্বজনদের দাবি, হিট স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে।
অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা, স্কুল বন্ধ বা অনলাইনে ক্লাস দাবি
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিকা রহমান। সকাল ৭টায় তার ক্লাস শুরু হয়ে ৯টা ৪০ মিনিটে ছুটি হয়েছে। ছুটি শেষে এই কোমলমতি শিক্ষার্থী বমি করে এবং কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে তাকে স্কুলে নিয়ে আসা অভিভাবক মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। যার কারণে বাসায় গিয়ে মেয়ের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আগামীকাল স্কুলে দেবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবেন।
শুধু শিক্ষার্থী সাদিকাই নয়, তার মতো মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক শিক্ষার্থী গরমের মধ্যে ক্লাস করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যার কারণে অভিভাবকদের দাবি, গরমের এই তীব্রতার মধ্যে স্কুল বন্ধ কিংবা অনলাইনে ক্লাস নিলে সেটি ভালো হয়।
সাদিকা রহমান ঢাকা পোস্টকে জানায়, অনেক গরম। ক্লাস করার সময় আমার অনেক খারাপ লেগেছে। পরে আমি বমি করে দিয়েছি। স্কুল বন্ধ করে দিলে ভালো হয়।
এই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. ফাইক। ঢাকা পোস্টকে এই শিশু শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাসরুমে অনেক গরম। অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ রুমে এসি নেই।
মো. ফাইকের মা বলেন, এই গরমের মধ্যে আমি তাকে বাইরে বের হতে দেইনি। আজকে প্রথম ক্লাস করেছে ও। অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে গরমে। এই গরমে শিশুদের বমি হওয়াটা স্বাভাবিক। এখন বাসায় যাওয়ার পর তার কী অবস্থা হয় সেটা পর্যবেক্ষণ করে স্কুলে আগামীকাল আনবো কিনা সিদ্ধান্ত নিবো।
এই অভিভাবক বলেন, আমি মনে করি করোনাভাইরাসের সময় অনলাইনে ক্লাস হয়েছে, এখনও গরমের মধ্যে একই নিয়মে ক্লাস হতে পারে। তারপর পরিস্ত যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে তখন আবার সরাসরি ক্লাস হতে পারে।
আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মনিকা দাস। তার বাবা সুব্রত দাস বলেন, এই গরমে বড়রা টিকতে পারে না। সেখানে বাচ্চারা কীভাবে ক্লাস করে ভাবতে কষ্ট লাগে।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে ক্লাস শেষে সবসময় খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। আজ সে গরমের মধ্যে ক্লাস করে এতো ক্লান্ত বোধ করছে যে খেলাধুলা না করে বের হয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে।
এই অভিভাবক বলেন, আমি মনে করি আরও কিছুদিন স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এতে হয়তো কিছুটা ক্ষতি হবে। তারপরও আমরা অভিভাবকরা বাসায় সময় দিয়ে, শিক্ষক রেখে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।
নোয়াখালীতে গরমে শ্রেণিকক্ষে অজ্ঞান হয়ে পড়ল মাদরাসাছাত্রী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গরমে অসুস্থ হয়ে শ্রেণিকক্ষে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে আফিফা রিজওয়ানা নামের এক মাদরাসাছাত্রী। রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার আমান উল্যাপুরের জয়নারায়ণপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই ছাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আফিফা ওই মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ও শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।জানা যায়, আজ সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। সবাই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের জন্য অপেক্ষা করছিল। ১০টার দিকে আফিফা হঠাৎ গরম সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার মাথায় পানি ঢালার পর তার জ্ঞান ফেরে। এরপর তার শিক্ষক বাবা তাকে বাড়ি নিয়ে যান।
মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, আফিফা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। আমরা তার মাথায় পানি ঢালার পর সে সুস্থ বোধ করলে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। আফিফা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করছিল। আমরা তাদেরও ছুটি দিয়ে দিয়েছি।
মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল তৈয়ুব উল্যাহ বলেন, আমাদের ১০টা ২০ মিনিট থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই এমন ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পাঠদানের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকলে এমন ঘটনা ঘটবে না বলে আমি মনে করি।
বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। আপনার কাছে শুনলাম। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য যদি এমন হয় তাহলে আমি বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে কথা বলব। পাশাপাশি শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিস্তারিত জানানোর জন্য বলব।