অনলাইন ডেস্ক: অসাধারণ গবেষণাকর্ম ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এলসেভিয়ার এই তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০১৯ সাল থেকে এই তালিকাটি প্রকাশ করছে দুই প্রতিষ্ঠান। এ বছর বাংলাদেশের ২০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের ২০৫ জন গবেষক এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। পুরো ক্যারিয়ারে গবেষণার মান; সাইটেশন, সাম্প্রতিক বছরের গবেষণা ও নির্দিষ্ট ফিল্ডে অবদান রাখার কারণে গবেষকদের এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমদ
অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমদ ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে কাজ করেন। ২৫০-এর অধিক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে তার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৩ সালেও তিনি শীর্ষ এই বিজ্ঞানীদের তালিকাভুক্ত ছিলেন। রিসার্চ ডট কমে তিনি বাংলাদেশের সেরা ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। শীর্ষ গবেষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই তালিকাটি করা হয় একজন গবেষকের পুরো ক্যারিয়ারের কাজের ওপর ভিত্তি করে। আমি প্রধানত কাজ করি ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে। ঐ ক্ষেত্রে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ’
অধ্যাপক মতিনের গবেষণার প্রধান ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে—অনসাইট স্যানিটেশন থেকে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল দূষণ; বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক দূষণ; নগরায়ণের প্রভাব; বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ লবণাক্ততার প্রভাব এবং মেটানোর উপায় এবং ভূগর্ভস্থ জল সম্পদের টেকসই উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা।
অধ্যাপক কাজী মতিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রাউন্ডওয়াটার কোয়ালিটির বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গভীর জলাধার-সম্পর্কিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গ্রাউন্ডওয়াটার টাস্কফোর্সেরও একজন সদস্য ছিলেন।
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম রেজাউল ইসলাম
সোশ্যাল সাইন্সের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম কাজ করেছেন। তবে তার মধ্যে সোশ্যাল রিসার্চ মেথডলজি নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন এই অধ্যাপক। এছাড়াও ক্লাইমেট, ডিজাস্টার, মাইগ্রেশান, চাইল্ড কেয়ার ও এসডিজি নিয়ে কাজ করেন তিনি। এখন পর্যন্ত ১৫০টির বেশি আর্টিকেল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি সোশ্যাল সাইন্সের বিভিন্ন বিষয়ে ২৪টি বই প্রকাশ করেছেন। শীর্ষ গবেষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন গবেষকের সারা জীবনের কাজের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে শুধু গবেষণাপত্রের সংখ্যা বিবেচনা করা হয় না। একই সঙ্গে গবেষণার মানের দিকটিও বিবেচনা করা হয়। কোন গবেষণার সাইটেশন কত, কোন গবেষণা কতজন মানুষ পড়েছে, কতজন মানুষ ডাউনলোড করেছে— এসব বিষয় বিবেচনায় আনা হয়। বিশ্বের সোশ্যাল ওয়ার্ক গবেষকদের মধ্যে আমার অবস্থান ৫২তম।’
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
অধ্যাপক মিজানুর রহমান শিল্পকারখানার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত। গত চার বছর থেকে তিনি এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে আসছেন। অধ্যাপক মিজান বলেন, ‘আমি কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে থাকি। দীর্ঘদিন থেকে এই ক্ষেত্রে আমি কাজ করে যাচ্ছি। কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই আবিষ্কারের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমি সাড়া পেয়েছি।’
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিম উর রশিদ
সহযোগী অধ্যাপক রশিদ ও কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন। তিনি অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সঙ্গে যুক্ত আছেন দীর্ঘদিন থেকে। শীর্ষ গবেষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছি। আমার নিজস্ব ক্ষেত্র নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছি।’
পপুলেশন সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন
অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন কাজ করেন পাবলিক হেলথ নিয়ে। এই তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানত কাজ করি পাবলিক হেলথ নিয়ে। সেই ফিল্ডে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফেরদৌস
অধ্যাপক ফেরদৌস কাজ করেন ফ্লুয়েড মেকানিক নিয়ে। এখন পর্যন্ত ৩৪০-এর অধিক গবেষণাপত্র আছে তার। এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি যে ফিল্ডে কাজ করি তার স্বীকৃতি হিসেবে এই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে।’
গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. নেপাল চন্দ্র রায়
অধ্যাপক নেপাল চন্দ্র রায়ের গবেষণার ক্ষেত্র হলো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট। এখন পর্যন্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তার ১০৬টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক নেপাল বলেন, ‘বিশ্বের ২ শতাংশ শীর্ষ গবেষকের তালিকায় ২ লাখ ২৩ হাজার ১৫২ জন গবেষকের মধ্যে আমার অবস্থান ৪১ হাজার ৫৮৩। আর আমার গবেষণার সাব-ফিল্ড (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট)-এ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩১ জনের মধ্যে আমার অবস্থান ৪১১তম। ২০২২ ও ২০২৩ সালেও আমি এই তালিকায় ছিলাম।’
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কাউসার আহমেদ
অধ্যাপক কাউসার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে অনার্স করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মত্স্যবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাশ করেন। এরপর জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমুদ্রবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে তিনি প্রায় ২ শতাধিক গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাকিবুল হক
অধ্যাপক রাকিবুল হক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইম্পোরিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন ভিজিটিং প্রফেসর। প্রযুক্তি অ্যাডোপশন ও ই-হেলথ নিয়ে কাজ করেন। দেশি-বিদেশি অনেক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন তিনি। তিনি ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যাসোসিয়েশন, ইউনেস্কোর ওপেন এডুকেশনাল রিসোর্সেস কমিউনিটি, এশিয়া ই-হেলথ ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক, ইনফরমেশন সিস্টেম অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্টারনেট সোসাইটির সদস্য।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম
ড. মাহমুদুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন। গবেষণায় তার আগ্রহের বিষয়গুলো হলো—রাডার সিস্টেম, অ্যান্টেনা অ্যারে সিগন্যাল প্রসেসিং, অ্যা।