এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল মৎস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত ও বিশ্বের ঐতিহ্যবৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নিরাপত্তা, বনজ সম্পদ রক্ষা এবং সমুদ্রসীমায় সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত আট মাসে উদ্ধার অভিযান, সন্ত্রাস ও মাদক দমন, চোরাচালান প্রতিরোধসহ নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে তারা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান।
তিনি জানান, গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমায় ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে ৯৫ জন ভারতীয় জেলেকে ৬টি নৌকাসহ ফেরত দেওয়া হয়। একইভাবে ৯০ বাংলাদেশি জেলেকে ২টি নৌকাসহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া, সমুদ্রে দুর্ঘটনাকবলিত ১৫০ জনসহ মোট ৩৫ জন জেলেকে উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড। পাশাপাশি, উপকূলীয় অঞ্চলের ২ হাজারেরও বেশি দুস্থ ও শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া, সন্ত্রাস দমনে গত কয়েক মাসে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের অভিযানে ৮৫ জন সন্ত্রাসী ও জলদস্যু আটক হয়। এ সময় ৯০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩৯০ রাউন্ড গুলি, ১০টির বেশি বোমা ও ককটেল জব্দ করা হয়। মাদকবিরোধী অভিযানে ৫ হাজারেরও বেশি ইয়াবা, ২৪ কেজি গাঁজা এবং বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ার ধ্বংস করা হয়।
সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান আরো জানান, চোরা শিকার ও বনজ সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সুন্দরবন এলাকায় ৮১ হাজার ভারতীয় বিড়ি, ৬৩৫টি কাঠের গুঁড়ি, ৬০০ কেজি হরিণের মাংস, ৮টি হরিণের চামড়া এবং ২০০টির বেশি ফাঁদ জব্দ করে। এ সময় ২০ জন হরিণ শিকারিকে আটক করা হয়। এছাড়া, ১ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ মাছ ধরার জাল, ৩০০ কোটি টাকার রেণুপোনা, ২ হাজার ৫০০ কেজি বিষাক্ত চিংড়ি এবং ১০ হাজার কেজি জাটকা মাছ জব্দ করা হয়েছে।
কোস্টগার্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান জানান, নৌবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বন বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ভবিষ্যতেও যৌথ অভিযান চলবে। তিনি বলেন, ‘কোস্ট গার্ড শুধু নিরাপত্তাই নিশ্চিত করছে না, জনসেবারও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা দেশের উপকূলকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।