সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ কাউনিয়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ে আলোচনা সভা বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি অডিটরিয়ামে বৃহস্পতিবার নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিদুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানাজ পারভীন, মৎস্য অফিসার ফারজানা আক্তার, উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি, আনসার ও ভিডিপি অফিসার ফেরদৌসী আক্তার প্রমূখ। সভায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধা সমূহ তুলে ধরেন নির্বাহী অফিসার। সবিধা সমূহ ১। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। তবে, বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ নাগরিকগণও ১০ বছর নিরবচ্ছিন্ন চাঁদা প্রদান করলে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন।
২। প্রবাস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রেরিত চাঁদার ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যাবে। এ প্রণোদনার অর্থ তার চাঁদা হিসেবে জমা হবে। ৩। ব্যাংকে সরাসরি গিয়ে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে এবং ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে চাঁদার টাকা জমা দেওয়া যাবে। ৪। প্রবাসী স্কিমে অংশগ্রহণকারীগণ ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা জমা দিবেন। ৫। চাঁদার টাকা ট্রেজারি বন্ডসহ নিরাপদ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করা হবে।
৬। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রদত্ত চাঁদা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর রেয়াত পাওয়া যাবে। ৭। আবেদনের সময় চাঁদাদাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক। ৮। মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থও আয়কর মুক্ত থাকবে। ৯। নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে, যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি প্রদান করা হবে। ১০। মোবাইল নম্বর ও প্রবাসীদের ইমেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা প্রদানের তারিখ অবহিত করা হবে। ১১। সোনালী ব্যাংকের প্রতিটি শাখা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সম্মুখ অফিস হিসেবে কাজ করবে। ১২। পেনশনের টাকা তোলার জন্য কোনো অফিসে যেতে হবে না। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেনশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে। ১৩। পেনশন স্কিম ও চাঁদার হার যেকোনো সময় পরিবর্তন করা যাবে। তবে, পেনশনার আইডি অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রগতি স্কিম ঃ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের জন্য এ সুবিধা। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অথবা নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে যুক্ত হওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্ষিথে যোগ দিলে ক্ষিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মী এবং বাকি অংশ প্রতিষ্ঠান দিবে। মাসিক চাঁদার হার ২০০০, ৩০০০ ও ৫০০০ টাকা।
সমতা স্কিম ঃ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী (যাদের আয়সীমা বাৎসরিক অনুর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা) স্বল্প আয়ের নাগরিক- গণের জন্য এ স্কিম। সমতা স্কিমে মাসিক চাঁদার হার ১০০০ টাকা। যার মধ্যে চাঁদাদাতা জমা দিবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দিবে সরকার।
প্রবাস স্কিম ঃ
১। বিদেশে অর্জিত অর্থ থেকে নিরাপদ সঞ্চয়ের লক্ষ্যে প্রবাস স্কিমে চাঁদা প্রদান করলে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ২। প্রবাস স্কিমে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা প্রদানে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। এ প্রণোদনার অর্থ তার চাঁদা হিসাবে জমা হবে। ৩। প্রবাস স্কিমে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী কর্মী ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সহজেই সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত এ্যাকাউন্টে চাঁদার অর্থ জমা দিতে পারবেন। ৪। পেনশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চাঁদাদাতাকে কোন অফিসে আবেদন করতে হবে না । নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান করলে ৬০ বছর পূর্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঊঋঞ (ঊষবপঃৎড়হরপ ঋঁহফ ঞৎধহংভবৎ) এর মাধ্যমে তার ব্যাংক একাউন্টে মাসিক পেনশনের টাকা জমা হবে। ৫। প্রবাস স্কিমে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত আসলে অন্য স্কিমে (প্রগতি, সুরক্ষা) চাঁদাদাতা হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
৬। প্রবাস স্কিমে অংশগ্রহণকারী চাঁদাদাতা ০৩ মাস, ০৯ মাস ও ১২ মাসের চাঁদা একসাথে জমা প্রদান করতে পারবেন। ৭। প্রবাস আয় থেকে দেশে প্রেরিত অর্থের বৃহৎ অংশ সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যয় হয়। প্রবাস পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করলে প্রবাসী কর্মী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে ভবিষ্যতে যখন কর্মহীন হবে তখন এ অর্থ ব্যয় করতে পারবে। ৮। প্রবাসী কর্মী নিজ নামে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন করে এ স্কিমে অংশগ্রহণ করবে, তাই এ কার্যক্রমে ৩য় কোন ব্যক্তির হস্তক্ষেপ থাকবে না। ৯। যেহেতু সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নমিনী রাখার সুযোগ রয়েছে তাই কোন কারনে প্রবাসী চাঁদাদাতা মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত সকল অর্থ মুনাফাসহ নমিনীকে ফেরত প্রদান করা হবে।
সুরক্ষা স্কিম ঃ স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য এ স্কিম। কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, গ্রহিণী, তাঁতিসহ সব অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান করে এ জিমে যুক্ত হতে পারবেন। মাসিক চাঁদার হার ১০০০, ২০০০, ৩০০০ ও ৫০০০ টাকা।