নৈসর্গির সৌন্দর্য্যে
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ তিস্তা নদী পাড়ে মাঝিরা নদী থেকে মাছ ধরার নৌকা গুলো নদীর তীরে ভিড়লে কিচির-মিচির শব্দে চারপাশ মাতিয়ে রাখে গাঙচিলের দল। নদীতে গা ভাসিয়ে পাখা মেলে পানির ঝাপটা ছিটিয়ে যখন গাঙচিল খেলে বেড়ায় নদীর বুকে, পালতোলা নৌকা, কাঁশবন আর সূর্য ডোবার নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে তিস্তা সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে দুই ঈদ, পয়লা বৈশাখ, দুর্গাপূঁজা ও বড়দিন সহ বিভিন্ন পার্বনে হাজার হাজার মানুষে ভরে উঠে সেতু এলাকা। এই এলাকাটি এখন বিনোদন প্রেমীদের পছন্দের নাম। ভ্রমন পিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে সূর্য ডোবার দৃশ্য, শীতের আমেজ, সবুজ প্রকৃতি, কাঁশ ফুল, নদীতে বিভিন্ন ধরনের নৌকা, আর দুই সেতুর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নদীর সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন পর্যটকরা। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে জায়গাটি হতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। দৃষ্টি সীমায় শুধু জলরাশি, নদীর বুকে ভাসছে নৌকা। জেগে ওঠা চর সেজেছে সবুজ গালিচায়। শুকনো মৌসুমে ক্ষীণ ধারায় বয়ে যাওয়া তিস্তার তীরে চাষ হচ্ছে সবুজ ফসল। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সড়ক সেতু ও রেলসেতুর সাথে প্রকৃতির মেলবন্ধন। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সাথে রংপুরসহ দেশের সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টিতে ১৮৩৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কাউনিয়া ও লালমনিরহাট সদর সীমান্তে তিস্তা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ করলে শুধু ট্রেন যোগাযোগ চালু হয়। তখন কোন সড়ক যোগাযোগ ছিল না। সড়ক যোগাযোগের জন্য ১৯৭৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রেল সেতুতে কাঠের পাটাতন দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচলের ব্যবস্থা করেন। সেই রেল সেতুর মেয়াদ ১৯৩৮ সালে শেষ হয়েছে। এর পর ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর অঞ্চলের স্বপ্নবিভোর অনেক আন্দোলন, প্রত্যাশিত তিস্তা সড়ক সেতুর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকেই রেল ও সড়ক সেতুকে ঘিরে তিস্তা নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে বহুগুনে বৃদ্ধিপায়। এরপর থেকেই প্রতিদিনই এলাকার ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিনোদন প্রেমী মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন তিস্তা পাড়ে। নৌকার মাঝিরা জানায় ভ্রমন পিপাসুদের কাছ থেকে যে টাকা পাই তাই দিয়ে সংসার চালাই। দর্শনার্থী মোশাররফ জানান, এতো সুন্দর বিনোদনের জায়গায় কোনো টয়লেট নেই। শিশুদের জন্য রাইড নেই। পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা ঠিক নয়। পরিবার নিয়ে আসা কপিল উদ্দিন জানান, এখানে বসার কোন স্থান নেই, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। শাহ রাজু বলেন, তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু এলাকা রংপুর বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এলাকাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নৌকাবিহার পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তিস্তা সেতু দুটি ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। ভ্রমণপিপাসু এসব মানুষের চাহিদা মেটাতে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষের আন্তরিকতার কমতি নেই। পর্যটকদের সেবা দিচ্ছেন গড়ে উঠা ছোট ছোট হোটেল গুলো। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্পটে পরিণত হবে তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু। দেশের ৩য় বৃহৎ রেল সেতু ও সড়ক সেতু মাথা তুলে দাঁড়ানোর পর থেকেই সেতুটি দেখতে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। তবে এই সেতু এলাকা ঘিরে পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা থাকলেও আজ পর্যন্ত সরকারী ভাবে কোন উদ্যোগ নেই। এলাকাবাসী ও বিশেষজ্ঞরা জানান, এলাকাটি পর্যটনের গুরুত্ব কাজে লাগাতে পরিকল্পিত উদ্যোগের প্রয়োজন। ওই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন জানান, শুরুতেই এই সেতু ঘিরে এলাকাবাসী পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিদুল হক বলেন, এখানে প্রধান আকর্ষণ হলো নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতু। এই সেতুর আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং নদীর প্রশান্ত পানির ধারা পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। এলাকাটি যেহুতু আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক ও জনপদ এবং রেল কর্তৃপক্ষের, উনাদের সাথে কথা বলে একটি উদ্যোগ নেয়া হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ সেতুকে ঘিরে বিশদ অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি হবে ত্বরান্বিত। সেতু ঘিরে তিস্তার দু’পাড়ে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।