প্রায় ২৫০০ একর ফসলী জমি বৃদ্ধি
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ কাউনিয়ায় উপজেলায় হারাগাছ, বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নে তিস্তা নদীর জেগে ওঠা পানি শূন্য চরে এখন সবুজের সমারোহ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন প্রকৃতি নিজ হাতে সবুজের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছেন। একের পর এক চরের জমিতে চাষ করা হয়েছে পেঁয়াজ, মরিচ, ভুট্টা, গম, বাদাম, আলু, মিষ্টিকুমড়া, সরিষা, গাঁজর, ধান, ধনিয়াপাতাসহ নানা শাকসবজি। বিকালে চরে গেলে প্রান জুড়িয়ে আসে। বর্তমানে বাড়ন্ত ফসলের গাছের দোল দেখে মনে শীতল এক অনুভূতি জাগায়।
সরেজমিনে তিস্তার চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি নদী ভাঙ্গন কবলিত। স্বাধীনতার পর থেকেই নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে উপজেলায় চাষের জমি আয়তনে কমলেও চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীতে পলিযুক্ত চর জাগায় কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ২৫০০ একর ফসলী জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি শূন্য চরে এ বছর ব্যাপকহারে রবি ফসল চাষ করেছে চাষিরা। প্রতিদিন চরের এসব জমিতে কাজ করছেন কৃষক কৃষাণী ও কয়েকশ দিনমজুর কৃষি শ্রমিক। কেউ শ্যালো মেশিন, কেউ বা সৌরচালিত আবার কেউ বা বৈদ্যুতিক পাম্প দিয়ে জমিতে পানি ও কেউ নিড়ানি দিচ্ছে, আবার কেউ আগাছা তুলছে। কর্মব্যস্ত তিস্তার চরে কৃষি ও দিনমজুর পরিবার গুলো। সবার চোখে স্বপ্ন বাম্পার ফলন হবে। সেই স্বপ্নের প্রধান বাঁধাও আছে, তা হচ্ছে ভারত থেকে উজানি ঢল অথবা আকস্মিক বন্যায় ফসলহানির। এক সময়ের চির যৌবনা প্রমত্তা তিস্তা নদী সময়ের পরিক্রমায় প্রবীণ হয়ে আজ মৃতপ্রায়। ঢেউহীন তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। বর্ষা মৌসুমের মতো তিস্তা পাড়ে নেই মাঝিমাল্লাদের হাঁকডাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার কর্মব্যস্ততা। তবু বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। তিস্তার বুকে চাষিদের প্রচেষ্টায় চলছে পিয়াজ, মরিচ, আলু, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়া, বাদামসহ নানা জাতের সবজির চাষ। নদীর বুকে গড়ে উঠেছে সবুজের সমারোহ। হঠাৎ কেউ দেখলে মনে হবে নদী তো নয়, এ যেন ফসলের দিগন্ত কোনো মাঠ। কৃষকরা বলছে তিস্তা এখন চর নয়, চর এখন গ্রামে পরিনত হয়েছে। তিস্তা নদীর ঐতিহ্য অনেক পুরনো। তিস্তা কোন শাখা নদী নয়। ভারতের সিকিমের হিমালয়ের ৭২০০ মিটার সুউচ্চ চিতামু হ্রদ থেকে উৎপত্তি হয়ে দার্জিলিংয়ের শিভক গোলা সিরিসংকটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে প্রবেশ করে। এরপর জলপাইগুড়ির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নীলফামারী জেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে তিস্তা নদী প্রায় ১১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গাইবান্ধা জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে মিলিত হয়েছে। তিস্তা পাড়ের ভিটে মাটি হারা শত শত মানুষ এবার ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরাতে শুরু করেছে চরে চাষাবাদ। খরশ্রতা নদীর ধু-ধু বালুচরে ফসলের সমারোহ। পাঞ্জরভাঙ্গা চরের কৃষক আনারুল জানান, এ বছর তিস্তা নদীতে পলিযুক্ত চর বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেছেন, ফলনও ভালো হয়েছে। আগাম আলুতে কৃষক ভালো দাম পেয়েছে। অন্য ফসলেও ভাল দাম পাওয়ার আশা তাদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানাজ পারভীন জানান, চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীতে প্রায় ২৫০০ একর পলিযুক্ত চর জেগেছে। কৃষকরা যেভাবে ফসলের পরিচর্যা করছে তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রাায় ২৫০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হবে। যে তিস্তা নদী বছরে কয়েকবার রূপ বদলায় সেই তিস্তার বুকে এখন বিভিন্ন ফসলের সমারোহ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিদুল হক জানান, তিস্তার চরে যেন কোন জমি পতিত না থাকে সে জন্য উপজেলা প্রশাসন কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে। কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেয়া আছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ একইঞ্চি জমি খালি রাখা যাবে না, তাই তিস্তার জেগে উঠা চরে বিভিন্ন সবজি চাষের জন্য পরিষদ থেকে কৃষকদের প্রনোদনা দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে তিস্তার চরগুলোতে সবুজের সমারোহ।