কাউনিয়ায় তিস্তার চর যেন নয় লাল সবুজের পতাকা
চরে দ্বিগুন ফসল
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ বন্যা যেমন আমাদের জীবনে অভিশাব অন্য দিকে আবার আর্শিবাদও বটে। চলতি মৌসুমে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার বন্যা আমাদের আর্শিবাদ হিসেবে এসেছে। বন্যায় এবার তিস্তা নদীর চরের হাজার হাজার একর জমিতে পলি পড়ায় অন্য বছর গুলোর তুলনায় এবার দ্বিগুন এমন কি তিন গুন পর্যন্ত ফলন বেশী হয়েছে। তিস্তা নদী বর্তমানে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপ নিয়েছে। বালুচরে যে জমি নিয়ে কৃষকেরা ছিলেন দিশেহারা, সে জমিতে এখন সোনা ফলছে। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছেন উপজেলার তিস্তা পাড়ের কৃষকেরা। সরেজমিনে তিস্তা নদীর চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যে নদীতে ছিল উত্তাল ঢেউ, সেখানে চাষ হয়েছে নানা ফসলের খেত। তিস্তার বুক চিরে জাগা চরে কৃষকেরা ফলাচ্ছেন বিভিন্ন রকম ফসল। যে কেউ থেলে মনে হয় তিস্তার চর জেন নয় লাল সবুজের পতাকা। দিগন্ত জুরে শুধু ললা সবুজ আর সোনালী হলুদের মাখামাখি। প্রকৃতি জেন আপন মহিমায় গালিচা বিছিয়ে দিছেন। আর সেই গালিচায় আনমনে জারি সারি আর ভাটিয়ালী গানের তালে তালে ফসলী জমি পরিচর্যার কাজ করছেন কৃষান কৃষানীরা। চির যৌবনা প্রমত্তা তিস্তা নদী ক্রমাগত প্রবীণ হয়ে আজ মৃতপ্রায়। খর¯্রােতা নদী এখন ঢেউহীন, তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর। বর্ষা মৌসুমের মতো তিস্তা পাড়ে নেই মাঝি মাল্লাদের হাঁকডাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার কর্মব্যস্ততা। তবুও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষজন। তিস্তায় জেগে ওঠা বালুচরে চাষিদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় চলছে আলু, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, পিয়াজ, বাদাম, সরিষাসহ নানা জাতের সবজির চাষাবাদ। তিস্তা নদীর বুকজুড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে লাল-সবুজের সমারোহ। দেখলে মনে হয় নদী তো নয়, এ যেন ফসলের দিগন্ত মাঠ। তিস্তা নদী সিকিমের হিমালয়ের ৭ হাজার ২০০ মিটার সুউচ্চ চিতামু হ্রদ থেকে উৎপত্তি হয়ে দার্জিলিংয়ের শিভক গোলা সিরিসংকটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে প্রবেশ করে, জলপাইগুড়ির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নীলফামারীর সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে তিস্তা প্রায় ১১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গাইবান্ধার ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে এসে মিলিত হয়েছে। তিস্তার চরে কথা হয় তালুকশাহাবাজ এলাকার কৃষক আঃ হাকিম এর সঙ্গে। তিনি জানান, তিস্তার চরে এবার প্রচুর পলি মাটি পড়েছে এবং নদীর পানি শুকিয়ে গেছে, তাই পলিযুক্ত বালুচরে চাষাবাদ করে এলাকার অনেক কৃষকেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কৃষিশ্রমিক আঃ রহিম বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে দুঃখের শেষ থাকে না আমাদের। আমরা পানিতে গরিব, ভাটায় ধনী। নদীর চরে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। সংসারে তেমন কোনো অভাব নাই। প্রতিদিনই কাজ পাচ্ছি। জানাগেছে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প ১৯৮৫ সালে সৌদি উন্নয়ন তহবিল, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আবুধাবি উন্নয়ন তহবিলের সহায়তায় নির্মিত হয়। তখন থেকে আমাদের কৃষিতে ভুমিকা রেখে চলেছে। সব মিলিয়ে তিস্তা নদীর জেগে উঠা চর এখন লাল-সবুজের পতাকায় পরিনত হয়েছে।