https://www.a1news24.com
২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:০৩

কর্ণফুলীতে ইউএনও-এসিল্যাণ্ডের নজরদারি শূন্য, পরিষদে চলছে লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেবা নিতে আসা স্থানীয় নাগরিকদের দাবি, পরিষদে সেবা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা একটি অনিয়মের চিত্র। তারা অভিযোগ করেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ওমর ফারুক এবং বহিরাগত যুবক জালাল উদ্দিন জনি নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন এবং অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইউএনও মাসুমা জান্নাত এবং এসিল্যাণ্ড মিজ রয়া ত্রিপুরা দীর্ঘদিন ধরে এই অনিয়মের বিষয়টি জানার পরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ অনুযায়ী, পরিষদে গিয়ে কোনো সেবা নিতে গেলে ২০ টাকা রশিদ দেওয়া হলেও, বাকি ২০ টাকার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। সচিব ও গ্রাম পুলিশ সহ, কথিত উদ্যোক্তা জালাল উদ্দিন জনি স্থানীয়দের সরাসরি বলছেন যে, এই অতিরিক্ত টাকা আদায় ইউএনও ও এসিল্যাণ্ডের নির্দেশে হচ্ছে।

সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম, মৃত্যু, ওয়ারিশ সনদ এবং ট্রেড লাইসেন্সের জন্য কিছু নির্ধারিত ফি নেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে জন্মনিবন্ধন এবং মৃত্যু সনদ যথাক্রমে ৭৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। তবে, তিনি জানান যে, চেয়ারম্যানের পূর্বের শাসনামলে সেবা ফ্রি ছিল, কিন্তু এখন এসিল্যাণ্ডের পরামর্শে ৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে ২০ টাকা পরিষদের ফান্ডে জমা হয় এবং বাকি ২০ টাকা প্রিন্ট খরচ হিসেবে নেওয়া হয়।

অথচ, এ নিয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, সচিব এবং চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই জালাল উদ্দিন জনি নিজেকে উদ্যোক্তা দাবি করে ইউনিয়ন পরিষদে বসে প্রতিদিন সেবা দিচ্ছেন, সরকারি কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন, এবং তাঁর পায়ের উপরে পা তুলে চেয়ারে বসে সরকারী কর্মচারীদের মতো আচরণ করছেন। এমনকি, জনি সেবা নিতে আসা বয়স্ক নাগরিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন এবং তার আচরণ সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইউএনও ও এসিল্যাণ্ড তাঁদের বিষয়টি জানার পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি, ফলে এই অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো পরিবর্তন না আসায়, নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়ে গেছে। পরিষদের গ্রাম পুলিশ, সচিব এবং কথিত উদ্যোক্তা জনি সবাই মিলে সেবাগ্রহীতাদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক সেবা পাওয়া কঠিন করে তুলছেন।

এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউএনও-এসিল্যাণ্ডরা বিষয়টি জানলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এলাকাবাসী হতাশ। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরিষদের সেবা পাওয়া বর্তমানে অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, চেয়ারম্যান বা প্যানেল চেয়ারম্যানদের কাছে পরিষদের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া উচিত, কারণ তারা মনে করেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সেবা দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে পাওয়া সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজ রয়া ত্রিপুরা জানিয়েছেন, “আমরা এই অনিয়মের ব্যাপারে শোনার পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং ইউএনও স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অপরদিকে, ইউএনও মাসুমা জান্নাত বলেছেন, “এটি সত্য যে, পরিষদে কিছু সমস্যা রয়েছে এবং সেখানে জনবল সংকট রয়েছে, তবে এই ধরনের অনিয়ম হলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।”

এতসব অভিযোগের পর, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপপরিচালক এডিসি মো. নোমান হোসেন জানিয়েছেন, “বড়উঠান ইউনিয়নে সেবা প্রদান এবং অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে এবং আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

এখন, এলাকাবাসী এবং সচেতন মহলের একটাই দাবি— দ্রুত সময়ে পরিষদের দায়িত্ব ইউপি চেয়ারম্যান বা প্যানেল চেয়ারম্যানদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তাছাড়া, তারা চান যে, ইউএনও এবং এসিল্যাণ্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক যাতে সেবা প্রদান সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং নাগরিকদের হয়রানি কমানো যায়।

আরো..