ঐতিহাসিক ভাবে কাউনিয়ার নামের সাথে যুক্ত কাউন চাষ হারিয়ে যাচ্ছে
সারওয়ার আলম মুকুল: কৃষি বিভাগের উদাসিনতায় দিন দিন কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাউনের চাষ। উপজেলায় এক সময়ে ব্যাপক ভাবে কাউনের চাষাবাদ হতো। কাউনের ব্যাপক চাষের কারনে এই উপজেলার নাম কাউনিয়া হয়েছে মর্মে প্রচলিত কথা রয়েছে। কাউন থেকে কাউনিয়া। সেই কাউনিয়ায় এখন আর কাউনের তেমন চাষাবাদ হয় না। ফলে কাউনিয়ার নাম করনের সার্থকতা ও কাউন চাষের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে জানাগেছে এক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চলে কাউনের চাষ হতো। এ আঞ্চলের মানুষের আথিতিয়তার বিশেষ স্থান করে নিয়েছিল কাউন। গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় পায়েস, ক্ষীর, মলা, বিস্কুট তৈরীর উপাদানে কাউনের চাউলের কদর ছিল ব্যাপক, তাই ভোজন প্রিয়াসী গৃহস্থরা ধান চাষের পাশা পাশি কাউনের চাষ করতো। প্রায় দেড় যুগ আগে চরাঞ্চলে কাউনকে ভাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতেন চরবাসী। চর ঢুসমারা গ্রামের চাষি নজরুল জানান, আশানুরূপ ফলন ও দাম না পাওয়ায় রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর জেগে উঠা ২৬টি চরাঞ্চলে কমেছে কাউনের চাষ। কয়েক বছর আগেও এসব চরাঞ্চল ছিল কাউনের চাষে পরিপূর্ণ। এক সময় রাজা জমিদাদের এলাকা হিসেবে পরিচিত রংপুর অঞ্চলের রাজা জমিদার বিত্তবানদের খাবার তালিকায় প্রসিদ্ধ কাউনের চালের পায়েস ও ক্ষীর সর্বাগে শীর্ষে ছিল। বতমানে কৃষি বিভাগের নজরদারীর অভাবে কালের আবর্তে কাউন চাষ হারিয়ে যাচ্ছেছ। চলতি মৌসুমে হাতে গোনা দু-একটি কাউনের ক্ষেতের দেখা মেলে। কিছু সৌখিন চাষি চরের জমিতে কাউনের চাষ করেছে। চর নাজিরদহ গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক নতুন নতুন ফসল চাষ করে আশানুরূপ ফলন ও লাভবান হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা পুরাতন ফসলের চাষ থেকে বিরত থাকছেন। চরাঞ্চলের কিছু কৃষক কাউনের চাষাবাদকে ধরে রেখেছেন। গদাই গ্রামের চাষি আলামিন জানান, কাউনের চাষ নিয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এতে আগামী এক যুগ পর কাউনের চাষ চোখেই পরবে না। এছারা সঠিক বাজার ব্যাবস্থাপনা না থাকায় চাষিরা কাউন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায় কাউনের তেমন চাষ না হওয়ায় এর চাষের সঠিক পরিসংখ্যান নাই।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানাজ পারভীন জানান কাউন এখন পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে সব সৌখিন মানুষ পাখি পুষে থাকেন তারা এখন কাউনের ক্রেতা। চরাঞ্চলের কৃষকদের ধান চাষের পাশা পাশি কাউন সহ ভিন্ন ভিন্ন ফসলের চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়ে তাকে। এলাকা বাসীর দাবী কাউনিয়র ঐতিহ্য কাউন কাউন চাষ বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রনদনা দেওয়া প্রয়োজন।