https://www.a1news24.com
৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৯:৪৯

এবার উল্টো কৃষ্ণাকেই ‘কাঠগড়ায়’ তুললো বাফুফে

স্পোর্টস ডেস্ক: অনেকদিন থেকে পায়ের ইনজুরিতে ভুগছেন সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্য কৃষ্ণা রানী সরকার। দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

কিন্তু সুফল মেলেনি। যে কারণে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে সহায়তা চেয়েও পাননি, এমন দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু এবার উল্টো তাকেই কাঠগড়ায় তুললো ফেডারেশন।

কৃষ্ণাকে ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়া নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন দেশের চিকিৎসকরা। তবে এ নিয়ে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের, এমনটাই দাবি তার। এমনকি জাতীয় দলের কোনো সতীর্থ এবং কোচও নাকি তার পাশে দাঁড়াননি। মনে জমে থাকা ক্ষোভ নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছেন দেশের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। এরপরই আজ কৃষ্ণার ব্যাপারে মুখ খুলেছেন বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।

আজ কিংস অ্যারেনায় চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে জাতীয় নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচ দেখতে এসে মাহফুজা আক্তার কিরণ জানান, একদিন আগেই নাকি বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার কথা বলেছেন কৃষ্ণার সঙ্গে। ভারত গিয়ে কোথায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে চান এই ফুটবলার সেসব জানতে চেয়ে রিকুইজিশন দিতে বলেছেন ইমরান। এরপরও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কিরণ বলেছেন, “আমরা বলেছি, ‘তুমি (কৃষ্ণা) ভারতে যাও। (চিকিৎসা করাতে) কত টাকা লাগতে পারে, সেটা তো আমরা জানি না। একটা রিকুইজিশন দাও। ডাক্তার দেখাও। কি লাগে, না লাগে, সেটা আমরা দেখব। ‘ এই কথা বলার পর সে কিভাবে এই স্ট্যাটাস দিতে পারে? মাঝখানে আমাকে বলেছে, ‘আপা, আমি আমার বাবার সঙ্গে যাবো (ভারত)। আপনি শুধু ভিসাটা করে দেন। ‘ আমি সেটাও করে দিতে বলেছি হাসানকে। তাও মাস দুয়েক আগের কথা। গতকাল ইমরান (বাফুফে সাধারণ সম্পাদক) কৃষ্ণাকে বলেছে রিকুইজিশন দিতে, তারপরও ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস। ”

জানা গেছে, ২০২৩ সালে কৃষ্ণার পায়ের অবস্থা দেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর বা ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অন্তত ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থাও নাকি করে দিতে চেয়েছিল বাফুফে। এ নিয়ে কিরণ বলেন, ‘বাফুফে অবশ্যই চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। এর আগে এমন ব্যবস্থা করা হয়নি? এখন ও যদি বলে অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে হবে… সেটা তো সম্ভব নয়। ভারত পাশের দেশ, সেখানে পাঠাতে চেয়েছি আমরা। ‘

‘ক্যাম্পে থাকা খেলোয়াড়দের সমস্ত চিকিৎসার বিষয়টি আমরাই দেখি। বাংলাদেশে যত চিকিৎসা আছে, কৃষ্ণার জন্য করা হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডের দেবাশীষ চৌধুরী অবস্থা দেখে বলেছেন, বাংলাদেশে এই ট্রিটমেন্ট হবে না। ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা সিঙ্গাপুর যেতে হবে। আমরা ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন এটা ভুল বোঝাবুঝি কিনা, সেটা ওকেই জিজ্ঞাসা করেন। ‘

কৃষ্ণা বাফুফের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়। একজন চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় খেপেছে বাফুফে। মাহফুজা আক্তার কিরণ জানিয়েছেন, শোকজ নোটিশ পেতে যাচ্ছেন কৃষ্ণা।

এদিকে আজ চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। আরও একটি ম্যাচ বাকি রয়েছে। কিন্তু স্কোয়াডে জায়গা হয়নি কৃষ্ণার। ইনজুরির জন্যই ছিটকে যেতে হয়েছে তাকে। যদিও সদ্য সমাপ্ত নারী লিগে নাসরিন ফুটবল একাডেমির হয়ে খেলেছেন তিনি। করেছেন ৩ গোলও। কিন্তু জাতীয় দল তো দূরের কথা, বাফুফের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে উল্টো বিপদে পড়ে গেলেন তিনি। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘২০২২ এ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে ইনজুরিতে পড়ি। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে। পা আগে থেকে ভালো কিন্ত এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারিনি। প্র্যাকটিস করলেই ব্যথা হয়। বাফুফে ফিজিও দিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট চলছে। সবাই জানে ইনজুরিটা অনেক বিরল। ব্যথা নিয়েই প্র্যাকটিস করছি। দেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ‘

‘২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশীষ চৌধুরী স্যারকে দেখিয়েছিলাম। উনি প্রায় আমাকে অনেকদিন দেখেন, যখন ব্যথা কমছিল না। স্যার বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ভারতে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতে। কিন্তু যখন আমি বাফুফে জানাই, উনারা বলেন আরও কিছুদিন দেশে ডাক্তার দেখাতে। আমি অনেকদিন তাদেরকে ভারতে যাওয়ার কথা বলছি। কিন্তু উনারা আমার কথায় কোন গুরুত্ব দেয়নি। আজও পর্যন্ত ব্যাথা নিয়ে প্র্যাকটিস করছি। ‘

‘২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পাই এবং ২০১৪ সালে সিনিয়ার জাতীয় দলে সুযোগ পাই, সেখান থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কখনো কোনো দলের বাইরে থাকতে হয়নি। প্রায় ১০ বছর একটানা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি। টুকটাক ইনজুরিতে পড়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে এত বড় ইনজুরিতে পড়ব কখনো ভাবিনি। অনেকদিন বিশ্রামে থাকার পর আর ভালো লাগছিল না এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। তাই ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছি। ‘

‘চীনে যখন এশিয়ান গেম খেলতে যাই, তিনটা ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছে। ব্যাক টু ব্যাক দুইটা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম। একজন প্লেয়ার হিসেবে এটা মেনে নেওয়া খুব দুঃখজনক। কষ্ট একটাই কখনো কোনো টিমমেট, প্লেয়ার বা কোচ কে বলতে দেখলাম না কৃষ্ণা ইনজুরিতে আক্রান্ত, তাকে দ্রুত ট্রিটমেন্ট করানো হোক। কারো কোনো মাথাব্যথাই নেই। ১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ। অনেক প্লেয়ারকে দেখেছি এভাবে হারিয়ে যেতে। মনে হয় সেই দিনটা আর বেশি দিন নেই কৃষ্ণার জন্য।

‘সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ এবং দোয়া করবেন। যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পরি। আবার আগের মতো মাঠে ফিরতে পারি। ফেডারেশনের পাশাপাশি দলের সতীর্থদের প্রতিও রয়েছে কৃষ্ণার অভিমান। এর আগে অভিমান নিয়ে জাতীয় দল ছেড়েছেন আনুচিং মোগিনী, সাজেদা খাতুন, সিরাত জাহান স্বপ্না। সাফজয়ী কৃষ্ণা কোন পথ বেছে নেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। ‘

আরো..