https://www.a1news24.com
১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৮:৩৮

ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য মানুষ শ্রমজীবি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অর্জিত বাংলাদেশে শ্রমিকদের উপর এখনও বৈষম্য রয়ে গেছে। এই বৈষম্য দূর করার একমাত্র উপায় ইসলামী শ্রমনীতি। তিনি বলেন, মালিক শ্রমিক সম্পর্ক হতে হবে ভাই ভাই। তাদের সম্পর্ক ভাই ভাই হলে কোনো বৈষম্য থাকবে না। তিনি সারাদেশে শ্রমিকদের জন্য সরকারী সুযোগ তৈরির দাবি জানান। ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় এলে শ্রমিকদের জন্য সঠিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে বলে তিনি ঘোষণা করেন। যারা বিগত ১৭ বছর দেশের মানুষের উপর জুলুম করেছে তাদেরকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। এদেশে কোনো নতুন ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুশিয়ার করেন। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোনো দলের লেজুরভিত্তি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নিজস্ব শক্তিতে ক্ষমতায় যেতে চায়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অবদান রাখার বিষয়টি উল্লখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসুক না আসুক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও তাদের সকল অঙ্গ সংগঠন দেশের যে কোনো সংকট সমস্যায় সবার আগে রাজপথে থাকবে।

৮ নভেম্বর, শুক্রবার বাদ জুমা দৈনিক বাংলা রোডে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সারাদেশ থেকে আগত হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতি এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হেয়।

সমাবেশ থেকে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে শ্রমিক কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। সমাবেশে আরো বলা হয়- ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রক্তে রঞ্জিত কোনো সরকারকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

সমাবেশে সভাপতিত্বে করেন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম। সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল আলহাজ্ব মাওলানা খলিলুর রহমান, জয়েন্ট সেক্রেটারী মোস্তফা কামাল ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ওমর ফারুক সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী এইচ এম রফিকুল ইসলাম, মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা ওবায়েদুর রহমান বিন মোস্তফা, আলহাজ্ব আঃ মোছাব্বির রুনু, মাওলানা নূরে আলম ছিদ্দিকী, মাওলানা শাহ মো: জামাল উদ্দিন, আলহাজ্ব মো: কামাল উদ্দিন আহম্মেদ, মাওলানা মো: গোলাম কিবরিয়া, প্রচার ও দা‘ওয়াহ সম্পাদক মো: হাসিবুর রহমান হাসিব, মো: তারিকুল ইসলাম, এইচ এম সাইফুল ইসলাম, মো: হায়দার আলী, কে এম বেলাল হোসেন, অধ্যপক মো: আব্দুল করিম, মুফতী মুহিব্বুল্লাহ কাজেমী, এডভোকেট মো.হানিফ মিয়া ,্ব মো: সাইফুল ইসলাম, আলহাজ্ব মো: শাহীন আহাম্মেদ, মো: শাহজাহান ভূইয়া, আলহাজ্ব এমদাদুল ফেরদৌস, মো: হারুনুর রশিদ, আলহাজ্ব মো: নজরুল ইসলাম, মো: শহীদুল ইসলাম, মো: আইয়ুব আলী চৌধুরী, হাজী আব্দুর রহমান দুলাল, মো: আনিসুর রহমান,আলহাজ্ব মো: শামীম খান, মো: মিজানুর রহমান, মো: কামাল হোসেন, আলহাজ্ব মো: মহিউদ্দিন, মাওলানা মো: হাসান ইমাম মুন্সি, সদস্য হাফেজ মাওলানা ওবায়দুল্লাহ বরকত, হাফেজ শাহাদাত হোসেন প্রধানীয়া, আলহাজ্ব এস এম ফজলুল হকসহ সারাদেশ থেকে আগত জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ।

সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম বলেন, আজকের এই শ্রমিক সমাবেশ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সুফল। এখনও শ্রমিকদের প্রতি মালিক-শ্রমিক বৈষম্য রয়ে গেছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত এই উপদেষ্টা সরকার শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লবে শ্রমিকদের অনেক বড় অবদান রয়েছে। শ্রমিকদের উপর বিগত সরকারের জুলুম নির্যাতন তুলে ধরে তিনি বলেন – আওয়ামী লীগের পলাতক প্রধানমন্ত্রী ভারতের দোসর ছিলেন এজন্যই কোনো পাসপোর্ট ভিসা না থাকা সত্বেও তাকে ভারতে রাখা হচ্ছে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে বিগত সরকারের কোনো ভূমিকা ছিলো না উল্যেখ করে তিনি বলেন – শেখ হাসিনা সরকারের মূল লক্ষ্য ছিলো দুর্নীতি এবং ১৭ বছর তারা লুটপাট করে পার করা। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আগামী নির্বাচনে কালো তালিকাভূক্ত করার দাবি জানান তিনি। হাজারো ছাত্র-জনতা-শ্রমিকদের রক্ত ঝড়ানো আওয়ামী লীগকে বিচারের দাবি তোলেন তিনি। আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত করার জোর দাবি জানান তিনি।

অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন – বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নিজেকে এখনও প্রধানমন্ত্রী দাবি করে। সে প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশে ফিরে আসুক! আমরা তার বিচার দেখতে চাই। ভারতে বসে এদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করে শেখ হাসিনা দেশের সাথে উপহাস করছে। এদেশের মাটিতে শেখ হাসিনার বিচার হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কৃষি ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আবদুর রহমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল বশার আজিজী প্রমূখ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ বলেন – ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে চলছে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গাজী আতাউর রহমান বলেন – বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে শ্রমিক কমিশন গঠন করা উচিত। তিনি উপদেষ্টা সরকারের কাছে শ্রমিক কমিশন গঠনের দাবি জানান। তিনি আরো বলেন – এদেশে এখন সকলের ঐক্য গঠন করা সময়ের দাবি। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেশে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে আর কাউকে ফ্যাসিবাদ আকারে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ৫ আগস্টে অর্জিত অভ্যূত্থানের ফলাফল কোনো এক দলের ঘরে নিতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি তার বক্তব্যে বাহাত্তরে সংবিধান পরিবর্তন করার জোর দাবি তোলেন এবং আওয়ামী রাষ্ট্রপতির অপসারণ চান।

সমাবেশে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ১৫ দফা দাবির ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। ঘোষণাপত্রে বলা হয় – বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক জনতার স্বাধীনতার যুদ্ধ শেষ হলো। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যাকাশে উঁকি দিল বিজয়ের নতুন সূর্য। শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আশার সঞ্চার হলো, এই বুঝি সব ধরনের নিপীড়িন ও বৈষম্য দূর হলো, সব শ্রেনী পেশার মানুষ নাগরিক হিসেবে সম ও ন্যয্য অধিকার পেল না! আশায় গুড়ে বালি। ২০২৪ স্বাধীনতার পর যেন এ এক নতুন বৈষম্য! শুরু হলো। সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হতে শুরু করল দেশের শ্রমিক সমাজ; যাদের হাত ধরে সচ্ছল ও শক্তিশালী হয় দেশের অর্থনীতি। সভ্যতা বিনির্মানে শ্রমিকদের অসমান্য অবদান থাকলেও, মৌলিক অধিকার থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত এ দেশের শ্রমিক সমাজ। এমতাবস্থায় শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজকের এই শ্রমিক সমাবেশ থেকে আমরা ২৫ দফা দাবি প্রস্তাব করছি।

১) শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ২)শ্রমিক বান্ধব রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় শ্রমিকদের সরাসরি অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে। ৩)বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম আকাশচুম্বী। তাই খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে শ্রমিকের নূন্যতম মজুরী ২৫,০০০/= (পঁচিশ হাজার টাকা) নির্ধারণ করতে হবে। ৪)ভর্তুকিমূল্যে শ্রমিক পরিবারকে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, শিশুখাদ্যসহ প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রি সরবরাহ করতে হবে। ৫)অসুস্থ শ্রমিকদের ভাতা প্রদান করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা ও বীমা সুবিধার আওতায় আনতে হবে। ৬)বাধ্যতামূলকভাবে সকল শ্রমিকের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া ব্যতিত শ্রমিক ছাটাই করা যাবেনা। ৭)কৃষকের উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং সুবিধাভোগীদের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৮)ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, সিএনজি ও রিক্সার লাইসেন্সের জটিলতা নিরসন করতে হবে। ৯)পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকল প্রকার চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। পণ্য পরিবহনে ওয়েস্কেল সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। ১০)প্রবাসি শ্রমিকদের হয়রানি ও টিকেট সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশগমনের পদ্ধতিগত জটিলতা ও খরচ কমাতে হবে। ১১)সিএনজি ও অটোরিক্সা থেকে দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিক চাঁদা আদায় বন্ধ করতে হবে। অকারনে ট্রাফিক মামলা ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং যাত্রী ওঠানামা ও অপেক্ষার জন্য নির্ধারিত সিএনজি ও অটোরিক্সা স্ট্যান্ড তৈরী করতে হবে। ১২)নির্মানখাতে অনুমোদনের জটিলতা ও ভোগান্তির কারনে নির্মানখাতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে ফলে বহু নির্মাণ শ্রমিক বেকারত্ব বরণ করছে। তাই দ্রুত ও সহজে প্লান অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৩)হকার ও ভ্রাম্যমান হকারদের পুর্নবাসন নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ করা যাবেনা। পজিশন ভাড়ার নামে অবৈধ চাঁদাবাজি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ১৪)দোকান কর্মচারী ও হোটেল-রেস্তরা কর্মচারীদের কর্মসময় ৮ ঘন্টা ও অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইম চালু করতে হরে। ১৫)সকল শিল্প কারখানায় নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো..