অনলাইন ডেস্ক: ডায়াবেটিস চিকিৎসার এক পর্যায়ে ইনসুলিন ছাড়া উপায়ান্তর থাকে না। যারা ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিন ব্যবহার করছেন, তাদের অনেকগুলো বিষয় জেনে রাখা জরুরি। এই বিষয়ে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ লে. কর্ণেল ডা: নাসির উদ্দিন।
ইনসুলিন সংরক্ষণের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা হলো দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। অত্যধিক উষ্ণ বা নিম্ন তাপমাত্রায় কিংবা সরাসরি রোদের সংস্পর্শে বা ডিপ ফ্রিজে রাখলেও এটি কার্যকারিতা হারায়। ঘরে ফ্রিজ না থাকলে ইনসুলিন ভায়ালের বদলে কলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
কেননা, ইনসুলিনের কলম ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে কোনো ক্ষতি হয় না। যাদের ঘরে ফ্রিজ নেই, তারা ঘরের অপেক্ষাকৃত শীতল স্থানে ইনসুলিন প্যাকেটে করে রাখতে পারেন। এ ছাড়া পানিপূর্ণ মাটির কলসির ভেতরে পলিথিনের প্যাকেটে আটকে ইনসুলিন রাখা যেতে পারে।
পেটের চামড়ার নিচে ইনসুলিন প্রয়োগের উৎকৃষ্ট স্থান। একজন মানুষের চামড়া দুই থেকে চার মিলিমিটার পুরু। এর নিচেই রয়েছে চর্বির স্তর। নাভির ওপরে ও নিচে ২ ইঞ্চি দূরে ভূমির সমান্তরালের জায়গাটুকু ইনসুলিন প্রয়োগের আদর্শ স্থান। এ ছাড়া ঊর্ধ্ব-বাহু এবং ঊরুর বাইরের দিকের মাঝের এক-তৃতীয়াংশে এটি প্রয়োগ করা যায়। ছোট বাচ্চাদের নিতম্ব দেশে ইনসুলিন দেয়া যেতে পারে।
ইনসুলিন নেয়ার আগে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ পরীক্ষা করার পাশাপাশি ভালো করে দেখতে হবে ইনসুলিনের চেহারা ঠিক আছে কিনা। ঘোলাটে হয়ে গেলে, রং বদলে গেলে কিংবা অধক্ষেপ পড়ে থাকলে এটি ব্যবহার করা যাবে না। চার সপ্তাহ পর খোলা ভায়াল আর ব্যবহার করা যাবে না। ভায়াল খুলে ফেলার পর ইনসুলিনের গাঠনিক কাঠামো বদলে যেতে পারে। এতে এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে এটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
বারবার ইনসুলিন প্রয়োগের ফলে ত্বকের পুরুত্ব বেড়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে, লিপো-হাইপারট্রফি। কখনও চামড়ার পুরুত্ব কমেও যেতে পারে। চামড়ার পুরুত্বের এই তারতম্য আছে কি না ইনসুলিন প্রয়োগের আগে তা পরখ করে নিতে হবে।
প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার ইনসুলিন প্রয়োগ করার স্থান চিকিৎসকের নজরে আনা দরকার। যদি ইনজেকশনের স্থানে এমনটি ঘটে কিংবা ফুলে যায় অথবা কোনো ক্ষত, প্রদাহ কিংবা ফোসকা পড়ে, তবে সেখানে ইনজেকশন দেয়া যাবে না।
অপরিচ্ছন্ন চামড়ায় ইনসুলিন দিলে ইনফেকশন হতে পারে। তাই ইনজেকশন দেয়ার আগে স্থানটি পরিষ্কার কি না দেখে নিতে হবে। পরিষ্কার হাতে চামড়া পরিষ্কার-পূর্বক ইনসুলিন প্রয়োগ করতে হবে। তুলোর বল নিরাপদ পানিতে কিংবা অ্যালকোহলে ভিজিয়ে স্থানটি পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করার সময় কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে পরিষ্কার করে দিতে হয়।
ইনসুলিন নেয়ার পর সুঁই ক্যাপের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে হবে, যাতে অন্য কিছুর সংস্পর্শে না লাগে। ফ্রিজে কখনও সুঁই খোলা অবস্থায় রাখা ঠিক হবে না। এতে এর ভেতর দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে আটকে যেতে পারে, যা ইনসুলিনের মাত্রায় গোলযোগ পাকাতে পারে। যখন সুঁই ভোঁতা হয়ে যায় কিংবা বেঁকে যায় অথবা অন্য কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে, তখন তা ফেলে দিতে হবে। ইনসুলিনের কলম ব্যবহারের পর ফ্রিজে রাখার দরকার নেই।
অবশ্যই ইনসুলিন প্রয়োগকারীকে ইনসুলিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা রাখতে হবে। ইনসুলিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলো– ওজন বৃদ্ধি, চামড়ার পুরুত্ব হ্রাস-বৃদ্ধি, প্রয়োগ স্থলে প্রদাহ, অ্যালার্জি এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া। ইনসুলিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া।
এছাড়াও খিটখিটে মেজাজ, নিঃসরণ, মাথাব্যথা, মনোসংযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি, ক্ষুধার অনুভূতি, বুক ধড়ফড়, অত্যধিক ঘাম এমনকি চেতনা বিলুপ্তি পর্যন্ত হতে পারে। হাইপোগ্লাসিমিয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিনি বা গ্লুকোজের শরবত অথবা মিষ্টি শরবত খেয়ে নিতে হবে। বাসায় গ্লুকোমিটার দিয়ে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে নিতে।