কলকাতা প্রতিনিধি: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হলেন টলিউড অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজে এক ডাক্তারি ছাত্রীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর এখনই পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তিনি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। তিনিই দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু। তিনি একাধারে মুখ্যমন্ত্রী, আবার পুলিশ মন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি সম্পূর্ণভাবে রাজ্যকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। আমরা শিক্ষকদের রাস্তায় দেখেছি, তারা অনশনে বসেছিলেন। এবার ডাক্তাররা রাস্তায় নেমে অনশনে বসেছেন। এই দুটোই সমাজের স্তম্ভ। এই স্তম্ভ দুটো এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। অন্যদিকে তিনি ডান্ডিয়া নেচে বেড়াচ্ছেন। আমরাও কয়েকদিন পরে খেলা শুরু করব। তাকে ইস্তফা দিয়েই ছাড়বো।’
শনিবার রাতে মেয়ের হত্যার সুবিচারের আশায় মৌন প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া সেই তিলোত্তমার (নাম পরিবর্তিত) বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার পরই এই মন্তব্য করেন শ্রীলেখা। এদিন রাজ্যটির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নাটাগড়ের অম্বিকা মুখার্জী রোডের বাসিন্দা তিলোত্তমার বাড়ির পাশে একটি অস্থায়ী মঞ্চে গিয়ে বেশ কিছুটা সময় কাটান ও তাদের পাশে থাকার বার্তা দেন এই অভিনেত্রী। পরে তিলোত্তমার যে ঘরে থাকতেন, সেই ঘরটি ঘুরে দেখেন। স্টেথোস্কোপ, বইপত্র, ওয়ার্ডরোব দেখার পাশাপাশি তার ওয়াশরুমও ব্যবহার করেন শ্রীলেখা। নিজের মুখেই এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন ‘আমরা সবাই বিচার চাই। আমি-আপনি, আমরা কেউ তার বাবা-মা’র কষ্ট বুঝবো না। ওদের যেই অনুভূতি, সেটা আমার-আপনার হচ্ছে না। কারণ তাদের সন্তান গেছে, আমার আপনার সন্তান যায় নি। কষ্ট করে ওই মেয়েটি বাড়িটি বানিয়েছে, গাড়ি কিনেছে। তবে ওই বাড়িতে গিয়ে আমার অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল। সেটা মুখে বলে বোঝানো যাবে না।’
শ্রীলেখার প্রশ্ন অভয়ার বাড়ির সামনে এত পুলিশ মোতায়েন কেন? আমরা তো এখানে কেউ গোলা, বন্দুক নিয়ে আসেনি। যারা অভয়ার বাবা-মা’কে দেখতে আসছেন তারা তো কেউ পিস্তল নিয়ে আসছে না, পুলিশ চাইলে খুঁজে দেখতে পারেন। এখানে তো কেউ থ্রেট দিতে আসেনি। তবে কিসের ভয়ে, কার ভয়ে ১০ জন পুলিশ এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে? যখন আরজি করের প্রিন্সিপাল ডা: সন্দীপ ঘোষকে ধরার কথা ছিল, তখন তাকে প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। তিলোত্তমার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয়নি, পুলিশ অর্থ দিয়ে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। পুলিশ মন্ত্রীকেই এইসব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে। পুলিশ মন্ত্রী ও পুলিশ মন্ত্রী আপনার এত ভয় কেন?’
বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন ২০০৬ সালে কলকাতার ধর্মতলায় মমতার ২৬ দিনের অনশন নিয়েও কটাক্ষ করেছেন শ্রীলেখা মিত্র। তার অভিমত ‘ডাক্তারদের আন্দোলনের সাথে মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনের কোন তুলনাই চলে না। মুখ্যমন্ত্রী যখন ধরনায় বসে ছিলেন তখন তিনি দামি চকলেট খেতো এটা শুনেছি। কারণ ২৬ দিন ওভাবে অনশন করা যায় না, তাছাড়া ২৬ কেজি ওজনও বাড়ে না! সাত-আট দিন অনশন চালিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের এই অবস্থা, আর উনি (মমতা) ২৬ দিন? এটা কি মগের মুল্লুক?
শ্রীলেখার প্রশ্ন, আমরা কি একদিন না খেয়ে থাকতে পারবো? সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আমরা না খেয়ে দেখি তো আমাদের কি অবস্থা হয়?
মুখ্যমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও কটাক্ষ করেন এই টলিউড অভিনেত্রী। তিনি বলেন উনি (মমতা) ‘ল’ পাস করেছেন, উনি আঁকেন, গান গান, ছবি আঁকেন, বাসন মাজেন… আরো কত কি করেন। উনি সব কিছু পারেন। ওনার তুলনা উনি নিজেই। ওদেরকে প্রশ্ন করতে হবে কেন সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিলেন? কেন বাবা-মা’য়ের মুখ বন্ধ করার জন্য রুপি দিয়েছিলেন? কেন তরিঘড়ি লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হল? কেন আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুমের পাশের দেয়ালটা ভাঙ্গা হচ্ছিল?’
আরজি করের শোকের আবহে তিলোত্তমার বাবা-মা, জুনিয়র ডাক্তাররা যেখানে আন্দোলন করছেন, সেখানে পুজোর উদ্বোধনের পাশাপাশি ঢাক বাজাতে ও ডান্ডিয়া নাচ নাচতে দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। তা নিয়ে শ্রীলেখার কটাক্ষ ‘এবার সাধারণ মানুষ উনার (মমতা) ঢাক বাজাবে, ওনার দলের (তৃণমূল কংগ্রেস) ঢাক বাজাবে।’
শ্রীলেখার প্রশ্ন ‘কেন সবাই মিলে বলবে না, যে আমরা উৎসব চাই না, আমরা জাস্টিস চাই। আমরা কোন রাজ্যে বাস করছি? আমরা কি হিটলারের শাসনকালে বাস করছি? উপরে উপরে চকচকে, লাইট জ্বলছে… সৎ সাহস থাকলে লাথি মারুন এই উৎসবে।’
সিবিআই তদন্তের উপরে তার ভরসা আছে বলেও জানান শ্রীলেখা। কারণ হিসেবে তিনি জানান ‘ঘুমোতে যাওয়ার সময় মানুষ যদি আশা না করে যে পরদিন আবার ঘুম থেকে উঠবে তাহলে কি করে হবে? আমি ভীষণ পজিটিভ একটা মানুষ। আমি আশা নিয়ে বাঁচি। অনেক নেগেটিভিটির মধ্যে দিয়ে গেছি। তারপরেও পজিটিভিটি দিয়ে আমি লড়াই করেছি। তাই আমার বিশ্বাস খুব শিগগিরই একটা ভালো কিছু ফল পাব।’
আরজি করের সুবিচারের দাবিতে পুজোর মধ্যেই কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পথে দেখা গেছে নাগরিক সমাজকে। অন্যদিকে ১০ দফা দাবিকে সামনে রেখে গত শনিবার থেকে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন জুনিয়র চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই অনশনরত অবস্থাতেই অসুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে সিসিইউ’তে ভর্তি হয়েছেন। অনিকেত মাহাতো নামে এক জুনিয়র চিকিৎসক।
অনিকেতের পরে কলকাতার মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে অনশনকারী আর এক জুনিয়র চিকিৎসক অনুষ্টুপ মুখার্জিকে। শনিবার রাতে কলকাতার মেডিকেল কলেজের সুপার স্পেশালিটি ব্লকের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে অনুষ্টুপকে।
এর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসক অলোক বার্মাকেও ওই হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।