লালমনিরহাট প্রতিনিধি:লালমনিরহাটে বন্যামুক্ত ও ভারী বর্ষণ না থাকায় চলতি মৌসুমে ফুলকপি বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতকালীন সবজি ফুলকপির আগাম ফলনে সাড়া ফেলেছেন জেলার সবজি চাষিরা। আগাম ফুলকপি জেলার সবজির চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী ৫ উপজেলায় আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন কৃষকরা। কম খরচে ভাল দাম পেয়ে খুশি ফুলকপি চাষিরা। ফুলকপির পাশাপাশি আগাম জাতের বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা,লাল শাক, পালং শাক,ধনেপাতা,টমেটো ও পটল চাষবাদ করেছেন।প্রতি বছর লালমনিরহাটের সদর,আদিতমারী, কালিগঞ্জ ও পাটগ্রাম উপজেলায় ব্যাপকভাবে আগাম সবজি চাষাবাদ হয়।
সরে জমিনে পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা হোসনাবাদ গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে ফুলকপির বিক্রির ধুম পড়ে যায় গ্রাম গুলোতে। পাইকাররা আসেন বিভিন্ন জেলা থেকে। কৃষাণ কৃষাণী দলবেঁধে জমি থেকে ফুলকপি সংগ্রহ করে তা ওজনের পর বিক্রি হয়। ফুলকপি বহন করতে আসে অটোরিকশা, পিকাপ ও ট্রাক। মালামাল ভর্তি করে ছুটে যান ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা গ্রামের ফাতেমা আক্তার বলেন,চার বিঘা জমি লিস্ট নিয়ে ফুলকপি চাষাবাদ করেছি। ফুলকপির ভালো ফলন হয়েছে। এই ফুলকপি ভালো দাম পাওয়ার জন্য আমার স্বামীর সহযোগিতায় ট্রাকে করে ঢাকা কাওরান বাজারে নিয়ে যাচ্ছি।
কৃষকরা বলছেন, রোগ বালাই কম থাকায় আগাম জাতের ফুলপির চাষ আবাদের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফুলকপি অধিক মুনাফা অর্জন করছি। আগাম ফুলকপি পাওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদাও বেড়েছে। বর্তমানে বাজারমূল্য বেশী পাওয়ায় চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন। পাইকারি দরে প্রতি কেজি ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা ও প্রতি পিস ২০থেকে ২৫ টাকা বিক্রি করেছেন কৃষকেরা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুত্রে জানান, বর্ষার পরপরই শীতে আগে আগস্ট মাসে ফুলকপির চারা রোপন করা হয়। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। এবার জেলায় আগাম ২২০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ হয়েছে। স্বল্প সময়ে ভালো ফলন হওয়ার পাশাপাশি অধিক মুনাফা পাওয়ায় অনেক চাষিই এখন ফুলকপি চাষে ঝুঁকছেন।
ফুলকপি চাষী পাটগ্রাম উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের মহির উদ্দিন বলেন,সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। খরচ হয়েছে দেড় লাখ আশা করি চার লক্ষ টাকার ফুলকপি বিক্রি করব। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে।
সবজি ব্যবসায়ী লিটন বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই ট্রাকভর্তি করে কৃষকদের ফুলকপি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকি। বর্তমানে ফুলকপির চাহিদা ব্যাপক। দাম ভালো। চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা দাবী করছেন,আগামী বছরে আবহাওয়া অনুকুল ও সার কীটনাশকের দাম কম এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে কৃষকরা আরও দ্বিগুণ আগাম জাতে সবজি ফলার আশা ব্যক্ত করেন।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, লালমনিরহাট জেলা তিস্তা বিধত জেলা হলেও এর অধিকাংশ জমি উঁচু ও মাঝারি উচু জমিতে শাকসবজি আবাদের উপযোগী। মোটামুটি আগাম শাকসবজি আবাদ হয়েছে। বর্ষার পরপরই শীতের আগ মুহূর্তেই শাকসবজি তুলনামূলক কম থাকে। এই মুহূর্তে যারা আগাম সাবজি আবাদ করবে তারা নিঃসন্দেহে বাজারে ভালো দাম পাবে।
আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করতে এবং তা বাণিজ্যিকীকরণ করতে কৃষি বিভাগ সারা বছর সবজি চাষে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা করে আসছেন।