https://www.a1news24.com
৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৭:৫১

আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির ‘চরম ক্ষতি’ করেছে: জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির ‘চরম ক্ষতি’ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ার‌ম্যান জি এম কাদের।শনিবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সংবর্ধনার আয়োজন করে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।

বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ বিভ্রান্তিকর একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগের ২৬টা সিট ছেড়ে দিলাম জাতীয় পার্টির ফেভারে। কিন্তু তারা সেসব ছাড়ে নাই, সব জায়গায় তাদের লোক দিয়ে রেখেছে। আমাদের অনেক প্রার্থী বিভ্রান্ত হয়েছে। অনেকে এটাকে মহাজোট বলেছেন, আবার অনেকে এটাকে সিট ভাগাভাগির কথা বলেছেন। আমি প্রথম দিন থেকে বলেছি, এটা মহাজোট হয়নি। সিট ভাগাভাগিও হয়নি। এটা বিভ্রান্তিকর, আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। এটি না হলে আমাদের ফলাফল এর চেয়ে আরো ভালো হতো।

জি এম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের চরম ক্ষতি করেছে। তারা বিভ্রান্ত করেছে আমাদের। এতে আমাদের দলের অনেকেই জড়িত ছিলো। টিকে থাকতে হলে দলের সংশোধন করতে হবে। দলের সদস্যদের সংশোধন হতে হবে। দলের যেসব নেতারা এমন করছেন তাদের আহ্বান জানাবো তারা যেন সংশোধন হন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে জাতীয় পার্টি। ভোটে জেতে ১১টি আসনে। নির্বাচনে এই ভরাডুবির জন্য দলের অনেক নেতা-কর্মী চেয়ারম্যান এবং জি এম কাদেরকে দায়ী করে বিক্ষোভও করেছেন।

১১ আসন নিয়ে এবার সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বিরোধী দলীয় নেতা হয়েছেন জি এম কাদের এবং উপনেতা হয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে জি এম কাদের বলেন, অনেকে বলেছে, আমাদের দল ভাগ হয়ে যাবে। দল ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা আমি এই মুহূর্তে, এই প্রেক্ষিতে দেখছি না। এরশাদ সাহেবের নাম ও আদর্শ দিয়ে আরও দশটি দল যে কেউ গঠন করতে পারে। কিন্তু আমাদের দল থেকে ভেঙে নিয়ে আরেকটি দল গঠন করার পরিবেশ পরিস্থিতি এই মুহূর্তে দেখছি না। তবে একটা জিনিস আমি বলতে চাই, আমাদের দলের ব্যাপারে মানুষের পারসেপশন কিন্তু ভালো নয়।

কয়েকদিন আগে জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। যদিও তার এই ঘোষণাকে পাত্তা দেননি জিএম কাদের ও চুন্নু। রওশনপন্থীরা নির্বাচন কমিশনেও তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। আগামী ২ মার্চ সম্মেলনের ঘোষণাও দিয়েছেন রওশনপন্থী মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ।

সংবর্ধনায় জি এম কাদের বলেন, আমরা অন্য দলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, সেটা পার্শিয়ালি কারেক্ট। আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসা চেষ্টা করছি। আমাদের দলের মধ্যে ব্যাপকভাবে সংশোধন হওয়ার দরকার আছে। আমরা যদি সেটা না করতে পারি তবে সামনের দিকে দল ভাঙবে না, তবে দলের অস্তিত্ব থাকবে না। দলকে মানুষ ভালোবাসবে না, দলের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না।

সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা কাদের বলেন, সরকারি দলের মন্ত্রীদের বক্তব্যে মনে হয় আমরা মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় চলে যাচ্ছে কি না। হয়ত সাধারণ মানুষ এটি খেয়াল করে না। শ্রদ্ধেয় আইনমন্ত্রী সেদিন একটি কথা বললেন, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ১০৭ বার সময় নেওয়া হয়েছে, ১২ বছর চলে গেছে। তারপর উনি বলেছেন আরো ৫০ বছর লাগলে দিতে হবে। এটাকে আমি দেখেছি মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার মতো। মধ্যযুগে পেশিশক্তির মাধ্যমে সবকিছু নির্ণয় করা হতো। অর্থাৎ জোর যার মুল্লুক তার। বিচারব্যবস্থা যদি বিলম্ব হয় তার মানে হচ্ছে, সে বিচার আর পাওয়া যাবে না। এই বিচার যদি আরো ৫০ বছর বিলম্ব হয় তাহলে এটি তো বিচারহীনতা হলো। তাহলে আমরা কি দেশকে বিচারাধীনতা উপহার দিতে যাচ্ছি?

তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, দলকে টেকাতে হলে সবাইকে একলাইনে থাকতে হবে। আমরা যদি ব্যর্থ হই তবে দল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা ভাঙন নিয়ে চিন্তিত নই। কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে যে ত্রুটি আছে সেগুলো সারিয়ে তুলতে হবে।

বিএনপি তাদের কর্মসূচি নেওয়ার চেষ্টা করেছে: চুন্নু

অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আশা অনুযায়ী আমরা নির্বাচনে ফল পাই নাই। আগামীতে দলকে সংগঠিত করবো। জাতীয় পার্টি থেকে দু-একজন চলে গেলেও দলের কিছু হবে না। দল ঠিক আছে থাকবে। বিএনপির বহুবার চেষ্টা করেছে তাদের আন্দোলনে যাবার জন্য কিন্তু আমরা যাই নাই বলে আমাদের সমালোচনা করছে। কোন দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরনের জন্য আমরা যাবো না। আমাদের সম্পর্কে গৃহপালিত বিরোধী দলের যে ধারনা সেটা বদলাতে চাই। সরকারকে জবাবদিহি করার মতো শক্ত অবস্থানে থাকবে এখন জাতীয় পার্টি। যদি দলীয়ভাবে কাজ করতে চাই তাহলে ১১ জনই যথেষ্ট।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বা‌য়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তৈয়বুর রহমান, সদস্য সচিব মো. সুলতান আহমেদ সেলিম।

আরো..