https://www.a1news24.com
২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:২৬

অর্ধেক কাজ শেষ না করেই পালিয়েছে ঠিকাদার

বেতগ্রাম-কয়রা ভায়া পাইকগাছা আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প

আমিনুল ইসলাম বজলু, পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধিঃ বেতগ্রাম-কয়রা ভায়া পাইকগাছা আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ালেও চার বছরে মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের প্রায় অর্ধেকের বেশি টাকা উত্তোলন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চুপিসারে তাদের নির্মাণ সামগ্রীসহ যন্ত্রপাতি তুলে নিয়েছে বাগেরহাট-১ এর সাবেক এমপি শেখ হেলালের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত মোজাহার এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মোজাহারুল ইসলাম। কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে অনীহা প্রকাশ করে সওজকে জানিয়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কের বাকি মূল কাজ বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাকি কাজ শেষ করতে ফের দরপত্র আহ্বানসহ প্রক্রিয়া শেষ করতে খরচ ব্যায় বেড়ে যাবে। তবে এই মূহুর্তে কাজের নামে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খুঁড়ে ফেলে রাখায় যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সড়কে যাতায়াতকারীরা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, তাদের বিভাগের আওতায় টেন্ডারে কার্যাদেশ পেয়ে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। সে মোতাবেক ২০২২ সালের ৩০ জুন কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটি কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় বরাদ্দও বৃদ্ধি করে। ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পে শুরুতে বরাদ্দ ছিল ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। পরে তা বৃদ্ধি করে ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা করা হয়। এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৮ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে ছিল সড়ক প্রশস্ত, মজবুত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সরলীকরণ, কালভার্ট নির্মাণ, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ। সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী আজিম কাওছার জানান, প্রকল্পের সর্বশেষ মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়। এরপর ফের মেয়াদ বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আবেদন করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি গত ১৫ আগস্ট এক আবেদনে জানান, তারা আর কাজ করবে না। এর পর থেকে তাদের সাথে বারংবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়মের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ৩০টি বাঁক সরলীকরণ ও সেখানকার সড়কের সব কাজ বাদ রেখে কাজ শুরু করে তারা। এরপর নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করে পূণ:নির্মাণ (সংষ্কার) কাজ শুরু করা হয়। কোন কোন এলাকায় কার্পেটিং করলেও বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ৬৪ কিলোমিটার সড়কের অন্তত ৩০টি স্থানে ২০ কিলোমিটার কাজ অসমাপ্ত রাখায় চলতি বর্ষা মৌসুমে সেখানে কাদা-পানি জমে একাকার হয়ে গেছে। প্রতিদিন জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে শত শত বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট, মাইক্রো, ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহন। স্থানীয় সূধীজনরা বলেন, পর্যাপ্ত কাজ না করে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের ঘটনায় সওজের কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল। এমন পরিস্থিতে তারা অতিরিক্ত উতোলনকৃত অর্থ ফেরতের পাশাপাশি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী কাজী মোজাহারুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প পরিচালক ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান রাখতে অবহিতপূর্বক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরো..