নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে দেশের ব্যয়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কত রয়েছে, তার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন সেই হিসাব গোপন করে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ না করলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফকে সেটি দেওয়া হতো। বর্তমানে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ রয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো তাদের আঞ্চলিক লেনদেনের জন্য আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তি করে।বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা হচ্ছে আকুর সদস্য। আকুর সদর দপ্তর হচ্ছে ইরানের রাজধানী তেহরানে। আকুর মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রতি ৩ মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো রিজার্ভ। যেকোনো দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ থাকলে সেটিকে খুব খারাপ অবস্থা বলা যায় না। বর্তমানে দেশের আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে বর্তমান ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ (১৬ বিলিয়ন) দিয়ে দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এরপর রিজার্ভ বাড়তে থাকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেড়ে হয় ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। তার পরের অর্থবছরে (২০২০-২১) ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় রিজার্ভ।
২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে (৪৮ বিলিয়ন), যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। কিন্তু সেটি চার মাসও টিকেনি। ফের নিচে নামতে থাকে ধীরে ধীরে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৮২ কোটি বা ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে।
দেশের প্রকৃত রিজার্ভ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও নিশ্চুপ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলো, বর্তমানে দেশে ব্যয়যোগ্য রিভার্ভের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার ১৮৪ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের ঋণের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দাতা সংস্থার ঋণ মেলে গত কয়েক দিনে। এর ফলে অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ আসায় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে দেশের নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখন এক হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১৬ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার ১৮৪ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।