https://www.a1news24.com
৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:১৯

অঞ্জনার পালিত পুত্র বললেন সব অভিযোগ ভুয়া, সমিতির আল্টিমেটাম

বিনোদন প্রতিবেদক: গত ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। তার মৃত্যু নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। অনেকে মনে করছেন স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি অভিনেত্রীর। চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে বলেও কারও অভিযোগ। কয়েকটি গণমাধ্যমে এসেছে, অভিনেত্রীর শরীরে আঘাতের চিহ্নের কথা!

এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পীদের অনেকে অভিযোগের তীর ছুড়ছেন অঞ্জনার পালিত সন্তান নিশাত মনির দিকে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ডিএ তায়েবকে প্রধান করে গত রোববার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সংগঠনটি। তিন দিন পর তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।

এদিন অঞ্জনা রহমান ও প্রবীর মিত্রের মাগফেরাতের জন্য আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিল শেষে ডিএ তায়েব বলেন, ‘অঞ্জনা আপার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সম্পত্তির কাগজপত্র, দলিল, ব্যাংক ড্রাফট এবং চেক বই তার বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না। এগুলো উদ্ধারে কাজ চলছে। শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে একটি ছায়া তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিপ্লব শরীফ, নাহিদা আশরাফ আন্না, রুমানা ইসলাম মুক্তি ও ইউসুফ খান। আগামী তিন দিনের মধ্যে আমাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনার সময় চিত্রনায়ক আলমগীর ও রঞ্জনা কয়েকটি প্রশ্ন করেছে মনিকে। আমরা জানতে চাই আসলে সমস্যা কোথায়। অঞ্জনা আপার সম্পত্তির কাগজপত্র, দালিল, ব্যাংকড্রাফ্ট, ব্যাংকের চেক বইসহ কিছু বাসায় পাওয়া যায়নি। এগুলো উদ্ধার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সেগুলো পাওয়া গেলে আমরা শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে যেকোনো সিদ্ধান্তে যাব।’

বিষয়টি নিয়ে অঞ্জনার পালিত পুত্র নিশাত মনি তখন জানান তিন দিনের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর উত্তর দেবেন। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন।

শুরুতেই নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তারা যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা নিরপরাধ। কোনো অন্যায় করিনি। আমার কাছে চিকিৎসার সব রিপোর্ট আছে। আম্মুর (অঞ্জনা রহমান) স্থাবর অস্থাবর যত সম্পদ ছিল সবকিছুর হিসাব আমরা তৈরি করেছি। আরও কিছু ডকুমেন্ট বের করতে হবে। কারণ কোনো টাকা পয়সার অপব্যবহার হয়নি। সকল ডকুমেন্ট আমরা পরশু দিন (আজ বুধবার) জমা দেব।’

এরপর জানান অঞ্জনার অসুস্থতার বিষয়টি বুঝতে পারেননি তিনি। তার কথায়, ‘আম্মু জীবনে কখনও ডাক্তারের কাছে যাননি। কখনও যেতে চাননি। এটা সবাই জানে। তাকে কখনও অসুস্থ হতে দেখিনি।’

পরে নিজেই অঞ্জনার দুই দফা অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘২০২০ সালে তার (অঞ্জনা) ডায়রিয়ার মতো হয়েছিল। তখনও ডাক্তারের কাছে যেতে চাননি। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এর আগে একবার চিকনগুনিয়া হয়েছিল। তখনও ডাক্তারের কাছে যেতে চাননি। একটা মানুষ কখনও অসুস্থ হযননি। গত নভেম্বরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কিছু ধরা পরেনি। এরপরও জ্বর আসা যাওয়া করেছে। তিনি যদি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ না করেন আমি কীভাবে বুঝব। অথচ এখন অভিযোগের সব তীর আসছে আমার দিকে।’

এদিকে অঞ্জনার মৃত্যুর পর নিশাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রী পলি। সংবাদকর্মীদের জানান, অঞ্জনাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও মনি তাকে নিবৃত করেন। মনি প্রথমে জানান, অঞ্জনা চাননি হাসপাতালে কেউ তাকে দেখতে যাক। তার কথায়, ‘আম্মু বলছিলেন কাউকে জানানোর দরকার নেই। আমি সুস্থ হয়ে বাসায় চলে যাব। তিনি যেহেতু নিষেধ করছেন আমি সেখানে কি করে যেতে বলব। তিনি তো নায়িকা মানুষ। সবসময় নিজেকে পরিপাটি রাখতেন। সে কারণে হয়তো দেখতে করতে চাননি। আমার কী করার আছে।’

এরপর আবার পলির অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করেন মনি। তিনি বলেন, ‘পলি আন্টি ঢাকার বাইরে ছিলেন। আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন, আম্মুকে দেখতে আসতে চান। এখন বলছেন আমি নাকি কাউকে দেখতে যেতে দিইনি। সুচরিতা আন্টি (অভিনেত্রী সুচরিতা), বিপ্লব শরীফ তো দেখতে গিয়েছিলেন আম্মুকে। তাহলে আমি বাঁধাটা কাকে দিয়েছি। এগুলো একদম মিথ্যা, ভুয়া। কোনো প্রমাণ নেই। পারলে প্রমাণ দিক। তাকে বলেছি, তুমি যেহেতু ঢাকায় নেই আগে ঢাকায় এসো। হাসপাতালে পাঁচটার আগে কাউকে ঢুকতে দেয় না। পাঁচটার পরে এসো।’

এদিকে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন অঞ্জনাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন মনি। বিষয়টি তুললে অভিনেত্রীর পালিত এ পুত্র বলেন, ‘শারীরিকভাবে যদি নির্যাতন করে থাকি তাহলে মা বেঁচে থাকতে কারও কাছে অভিযোগ করেননি কেন। তিনি কি কারও কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন যে আমি তাকে নির্যাতন করেছি। উল্টো আক্ষেপ নিয়ে বলেছেন, মনির জন্য কিছু রেখে যেতে পারেননি, মনির কি হবে। সাক্ষী আছেন। যেমন আমাদের রুনু আন্টি। হাসপাতালে তার হাত ধরে আম্মু বলেছেন, আমার মনিকে তোমরা দেখো।’

এদিকে অঞ্জনার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রুনু নামের ওই নারী অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে জানিয়েছিলেন, তিনি হাসপাতালে দেখতে গেলে অঞ্জনা জানিয়েছিলেন, তাকে সংঘবদ্ধভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গ তুললে মনি জানান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ৫ আগস্টের পর থেকে চাপে ছিলেন অঞ্জনা। সেকারণে-ই রুনুকে এমন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আম্মু যেহেতু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন সেহেতু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তোপের মুখে পড়েন। বিভিন্ন অচেনা নাম্বার থেকে আমাকে ও আম্মুকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হতো। সে সময় প্রায় দুই মাস আম্মু বাসা থেকে বের হননি। এসব নিয়ে মেন্টালি ডিপ্রেশনে থাকতেন। আমার বাসার দারয়ানকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন, ওই সময় রাত দুইটার পর ২০-২৫ জন করে লোক আসত। জানতে চাইত, এই বাসায় অঞ্জনা থাকেন কি না।’

একইসঙ্গে বলেন, ‘রুনু আন্টিকে আম্মু বলেছেন, আমার মনিকে তোমরা দেখো। ওর জন্য কিছু রেখে যেতে পারিনি। এসব কিন্তু রুনু আন্টি বলেছেন। কিন্তু কথাগুলো সাংবাদিকরা কেটে দিয়েছেন। জানি না কেন। আমি যদি তার ওপর অত্যাচার করে থাকি তিনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আমার কথা কেন বলবেন। হাসপাতালে তো তিনি সুস্থ মানুষের মতো কথা বলেছেন। সবসময় আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। আমি বাসায় গিয়েছি কি না খেয়েছি কি না জানতে চেয়ছেন। আমাকে বলেছেন, আমার ভালো লাগছে না। ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে আসতে বল বাসায় চলে যাব। এগুলো কল রেকর্ড চেক করলেই পাওয়া যাবে। আর তাকে আমি শারীরিক নির্যাতন করেছি যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আমাকে যা শাস্তি দেওয়া হবে মাথা পেতে নেব। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ কেন আনা হচ্ছে এবং সেটি আম্মু চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে কেন? এতদিন তো কেউ কেন এসব কথা বলেনি?’

আরও অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে নেওয়ার আগে বাসায় বেশ কয়েকদিন বিছানাগত ছিলেন অঞ্জনা। সেসময় বিছানায় মল-মুত্র ত্যাগ করেছেন তিনি। তবে অভিযোগটি উড়িয়ে দেন মনি। বলেন, ১৭ তারিখ আমাদের বাসায় আসেন পার্থিব রাশেদ (চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সমালোচক রাশিদুল ইসলাম) মামা। উনি অনুদান কমিটিতে আছেন। ওনার সাথে আমাদের ব্যবসায়িক ব্যাপার ছিল। সঙ্গে ছিলেন প্রযোজক সামসুল আরিফিন মামা। আম্মু তাদের খাওয়ান। ১৮ তারিখে নৃত্য পরিচালক ইউসুফ মামা আসেন। তাকেও আম্মু সামনে বসিয়ে খাওয়ান। তখন আম্মুর জ্বর। একটা মানুষের জ্বর আসে-যায়। তিনি ওষুধ খাচ্ছেন, শপিংও করছেন। ১৯ তারিখ সকালে জ্বর ছিল না। আম্মু রান্না করেছেন। আমাদের বাসায় গেস্ট এসেছে। ২০-২১ তারিখ তার শরীরটা একটু খারাপ হয়। ডায়রিয়া হয়েছিল। একটা মানুষের ডায়রিয়া হলে দুইটা দিন কি বিছানা থাকতে পারে না। তখনও তো সবার সাথে কথা বলেছেন। সক্ষম ছিলেন। কিন্তু ছড়ানো হয়েছে তিনি বিছানায় টয়লেট করেছেন। বিষয়টা তেমন না। ওটা মানুষ ছড়িয়েছে। ২২ তারিখ আম্মুকে স্যালাইন দেওয়া হয় এবং ২৩ তারিখ আমি বলি, আম্মু তোমাকে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। আম্মু তখনও জানান তার ডাক্তারের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে না। তাহলে আমি কীভাবে বুঝব? ১৫ দিন বা ৭ দিন যদি বিছানায় থাকতেন তাহলে একটা কথা ছিল। তিনি ২০ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন বিছানায় ছিলেন। একটা মানুষ অসুস্থ হলে ৩ দিন বিছানায় থাকতেই পারেন। এছাড়া যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখনও তো অচেতন অবস্থায় নেইনি। তাহলে আমরা কীভাবে বুঝব তিনি স্ট্রোক করেছেন। শুধু বলেছিলেন ডান হাত ও ডান পায়ে শক্তি কম পান। হাসপাতালে সিটি স্ক্যানের পরে বোঝা গেল তিনি স্ট্রোক করেছেন।’

তবে কেন এত অভিযোগ মনির বিরুদ্ধে? পালিত পুত্র বলেই কি? তিনি বলেন, ‘আমার মা (অঞ্জনা রহমান) যেখানে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন আমি তার ছেলে সেখানে পালিত ছেলে কথাটি কিভাবে আসে। তিনিই তো আমাকে নিজের ছেলে বলে গেছেন। এখন সবাই যদি আমাকে পালিত ছেলে বলে কটাক্ষ করে সে বিচার আমি কার কাছে দেব।’

আরো..